তিমির বনিক, মৌলভীবাজার থেকে: বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর ‘হাকালুকি’। এটি এশিয়ার বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি। হাকালুকি হাওরে রয়েছে প্রায় ২৪০টি বিল। বছরের বিভিন্ন সময় এসব বিলকে ঘিরে বিরল প্রজাতির পাখিদের বিচরণে মুখর হয়ে উঠে গোটা এলাকা। কিন্তু কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে অবাধে চলছে পাখি শিকার।
পাখি শিকার বন্ধে বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগ না থাকায় কোনোভাবেই থামছেনা পাখি শিকার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর বিশ্বের অনেক শীতপ্রধান দেশ থেকে হাকালুকি হাওরে নানা প্রজাতির পাখির আগমন ঘটে। এসব পাখির মধ্যে রয়েছে গুটি ইগল, কাস্তেচরা, কুড়া ইগল, সরালি, পানভুলানি, কালিম, সাদা বক, কানি বক,বালিহাঁস,, পানকৌড়ি, ভুতিহাঁস, গিরিয়াহাঁস, ল্যাঞ্জাহাঁস। এর মধ্যে দেশীয় প্রজাতির নানা জাতের পাখি রয়েছে। হাকালুকি হাওরে অসাধু শিকারিরা বিষটোপ আর ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করায় দিন দিন অতিথি পাখির আগমন কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে শীতকালে হাওরে অতিথি পাখি আগমনের সাথে পাখি শিকারিরা আরও বেশি পাখি শিকার করে থাকে।
কিছুদিন আগে, জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ি এলাকায় নানান প্রজাতির পাখি বিক্রিকালে বেশ কয়েকটি টিটি পাখি, ছোট ডুবুরি, জলমোরগ, ওটা, বাবু বাটান পাখিসহ মোট ২০ টি উদ্ধার করে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে বনবিভাগ অবমুক্ত করে। তবে পাখি শিকারিকে এ সময় হাতেনাতে পেলেও বনবিভাগ তাকে ছেড়ে দেয়।
মো. শামীম মিয়া নামে এক চাষী বলেন, হাওরে প্রতি বছরের মতো এবারও অতিথি পাখি শিকার চলছে অবাধে। অনেক সময় শিকার বন্ধে নিজ থেকে পাহারা দেই। এরপরও শিকারিরা নানাভাবে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করছে । শিকারিদের দেওয়া বিষটোপে অনেক সময় আমাদের হাঁস মারা যায়। বাধা দিলে তারা আমাদের হুমকি দেয়।
পরিবেশকর্মী খোরশেদ আলম বলেন, হাওরখাল, মাইছলা, গজুয়া,নাগুয়া, পিংলা ও বাইয়াবিলে বেশি শিকারের ঘটনা ঘটে। পাখি শিকারিরা রাত-দিন নানাভাবে ফাঁদ পেতে বন্দুক ও জাল দিয়ে হাওরে পাখি শিকার করছে। এছাড়াও বিষটোপ দিয়ে পাখি মারা হচ্ছে। বিষটোপ খেয়ে পাখির পাশাপাশি অনেক খামারির হাঁসও মারা যাচ্ছে। শিকারিরা পাখি শিকার করে স্থানীয় বিভিন্ন বাজারসহ বাসাবাড়িতে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন হোটেলে এসব পাখির মাংস বিক্রি হচ্ছে।
নানান প্রজাতির পাখি শিকার করার বিষয়টি স্বীকার করে জুড়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, লোকবল সংকটে অনেক সময় পাখি শিকারিদের ধরতে আমাদের বেগ পেতে হয়। তবে এ ব্যাপারে আমরা তৎপর রয়েছি।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পাখি শিকার বন্ধে আমাদের প্রধান অন্তরায় লোকবল সংকট। মাঝেমধ্যে আমরা বন্দুক দিয়ে পাখি শিকারের খবর পাই। এ ব্যাপারে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এরপরও যদি কেউ পাখি শিকার করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।