![InShot_20240209_121224067](https://banglaexpressonline.com/wp-content/uploads/2024/02/InShot_20240209_121224067.jpg)
তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর এখন যেন এক হলদে ফুলের রাজ্য পরিবেষ্টিত। গাছে গাছে হলুদ সূর্যমুখী ফুল দেখে মন জুড়িয়ে যায়। হাওরের বুক চিরে হলদে ফুলের রাজ্যে প্রতিনিয়ত পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। বিস্তীর্ণ এলাকায় সূর্যমুখী ফুলের হলুদাভাব দৃশ্য সহজেই মানুষকে কাছে টানে। সারি সারি সূর্যমুখী গাছের ডগায় বড় বড় আকারের ফুল, যেন দিগন্তজুড়ে হলুদের সমারোহ। বিকেলে যখন সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে ঠিক তখনই হাকালুকির সৌন্দর্য যেন ফুটে উঠে সূর্যমুখীর হাসিতে। মৃদু রোদে দূর থেকে মনে হয় যেন সূর্যের মেলা বসেছে। সূর্যমুখীর অপরুপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য প্রতিদিন হাওর পাড়ে ভীড় করছেন পর্যটকরা।
হাকালুকি হাওরে হলুদ ফুলের মন মাতানো ঘ্রান আর মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে কৃষকের মায়ার ফসলি জমি । বিনোদনের পাশাপাশি মূলত তেল উৎপাদনের লক্ষ্যে সরকার সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের প্রণোদনাসহ উৎসাহ দিচ্ছে। চাষিরা বলেন, সূর্যমুখী চাষ করার পদ্ধতি মোটামুটি সহজ। প্রতি বিঘা জমিতে তিন কেজি বীজ, সামান্য সার ও কীটনাশক হলেই পর্যাপ্ত। সবকিছু মিলিয়ে খরচ হয় ৪/৫ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে কৃষকের লাভ খুবই ভালো হয়। তাই দিন দিন এ চাষের দিকে কৃষকরা ঝুঁকছেন ও আকৃষ্ট হচ্ছে বেশি।
হাকালুকি হাওরে সূর্যমুখীর বাগান দেখতে আসা পর্যটক নন্দিনী মল্লিক ও নিখিল মালাকার বলেন, পড়ন্ত বিকেলে সূর্যমুখীর হাসি সত্যিই অসাধারণ। সূর্যমুখীর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে আমরা হাকালুকি হাওরে এসেছি। হাকালুকি হাওর এলাকায় তেলবীজ হিসেবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ যেন দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সরকারি সহায়তায় অল্প ব্যয়ে প্রচুর লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের আগ্রহের যেন শেষ নেই। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এশিয়ার এ বৃহত্তম হাওরে সূর্যমুখী চাষ হতে পারে অন্যতম সম্ভাবনাময় ফসল।
সূর্যমুখী বাগান দেখতে আসা পর্যটক সঞ্জীব দে বলেন, হাওরের বুকে সূর্যমুখীর ফুল গুলো দেখতে খুবই ভালো লাগছে। তবে হাওড়ে আসার রাস্তাঘাট ভালো না থাকার এখানে আসতে খুবই কষ্ট হয়। সরকারের এদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
হাকালুকি হাওরে সূর্যমুখী চাষী কামরুল ইসলাম ও সাইফুর রহমান বলেন, হাকালুকি হাওরের পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। ফলনও খুবই ভাল হয়েছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সূর্যমুখী চাষ আরোও সম্প্রসারণ করব। সরকারের কাছ থেকে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে পরামর্শের পাশাপাশি বিনামূল্যে বীজ পেয়েছি।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, প্রনোদনার আওতায় জুড়ীতে ২৩০ জন কৃষক সুর্যমুখী চাষ করেছে। এবার উপজেলায় থেকে ২৩০ বিগা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। চাষকৃত সূর্যমুখীর মধ্যে হাইসান-৩৩, আরডিএস ২৭৫ জাতের আবাদ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মাহমুদুল আলম খান বলেন, জুড়ী উপজেলায় মোট ২৩০ বিগা জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। সূর্যমুখী চাষ করে কৃষকরা যাতে লাভবান হয় সেই লক্ষ্যে সরকার কৃষকদের প্রণোদনা দিচ্ছে। সূর্যমুখী ভোজ্য তেল হিসেবে গুণগত মানের দিক থেকে বেশ ভালো। বাজারে সূর্যমুখীর চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় এবং উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষের উপযোগী হওয়ায় এ বছর ভালো ফলনের মাধ্যমে চাষীদের মুখে হাসি ফুটবে বলে আমরা আশা করছি। সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে আমরা নিয়মিত উঠান বৈঠক ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।