গ্রীষ্মের সুস্বাদু ফল তরমুজ। এই গরমে তৃষ্ণা মেটাতে রসালো এ তরমুজের কোনো জুড়ি নেই। ওপরে কালো বা হালকা সবুজ ভেতরে লাল এই দুই ধরণের তরমুজ সাধারণত আমাদের অঞ্চলে চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু ওপরে হলুদ ভেতরে লাল এ জাতীয় তরমুজ আমাদের এলাকায় এই প্রথম চোখে পড়েছে। হলুদ রঙের এ তরমুজ চাষ করে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ইসমাইল হোসেন নামের এক যুবক। আর্থিক লাভের পাশাপাশি একজন সফল চাষি হিসেবেও ইতিমধ্যে এলাকাজুড়ে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে তার তরমুজ বাগানটি একনজর দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে ভিড় করছেন। তার থেকে পরামর্শও নিচ্ছেন অনেক চাষিরা। তার বাড়ি উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের দাওরাইট গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের ছফির উদ্দিনের ছেলে।
ইসমাইল হোসেনের ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, কচি লতানো গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে মাচায় ঝুলছে অসংখ্য হলুদ রঙের তরমুজ। নয়নাভিরাম এ তরমুজগুলো যাতে বোঁটা থেকে ছিঁড়ে পড়ে না যায়, সেজন্য তরমুজগুলোকে লাল রঙের প্লাস্টিকের জালি ব্যাগের ভেতরে ঢুকিয়ে মাচার সঙ্গে বেঁধে দিচ্ছেন কৃষক ইসমাইল। এতে করে হলুদ ও লাল রঙের মিশ্রণে বাগানের সৌন্দর্য্যকে যেন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকগুন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আমাদের এলাকায় তরমুজ চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু ইসমাইল হোসেন তার ২৫ শতাংশ জমিতে মাচা পদ্ধতিতে এবারই প্রথম অসময়ে হলুদ রঙের তরমুজ বা গোল্ডেন ক্রাউন চাষ করেছেন। ১০মার্চ তিনি এ তরমুজের বীজ রোপণ করেন। রোপণ থেকে ফল পাকা পর্যন্ত সময় লাগে ৬০ দিন। এখন তার ক্ষেতের মাচায় ঝুলছে দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের হাজারো তরমুজ।
চাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, বিএ পাশ করে বেকার বসেছিলাম। করোনার কারণে কোথাও যেতে পারছিলাম না। হতাশায় ভুগছিলাম। কি করব, কোথায় যাব। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ঠিক তখনি আমাদের ব্লকের কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. হামিমুল হক সোহাগ ভাইয়ের পরামর্শে এ তরমুজ চাষে আগ্রহী হই। তিনি উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ঢাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করে আনেন। তার সার্বিক সহযোগিতায় বিশেষ কায়দায় জমি প্রস্তুত করে ২৫ শতাংশ জমিতে বীজ রোপণ করি। কচি ডগা থেকে লতা বেড়ে উঠা পর্যন্ত কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করিনি। সেক্স ফেরোম্যান বা হলুদ ট্যাপ পদ্ধতিতে বালাই দমন করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বীজ, সার আর সুতোর জাল বাবদ এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। বেশ ভালো ফলন হয়েছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছেন দেখতে। পরামর্শও নিচ্ছেন। বর্তমানে তরমুজের দামও ভালো। এ রমজানে প্রতিটি তরমুজ আকার ভেদে ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিনই ক্ষেত থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন লোকজন। সবমিলিয়ে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারব বলে আমি আশা করছি।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল হাসান আলামিন বলেন, এ অঞ্চলের মাটি হলো দোআঁশ। এ মাটিতে তরমুজের ফলন খুবই ভালো হয়। হলুদ জাতের তরমুজ বা গোল্ডেন ক্রাউন চাষ এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। ইসমাইল হোসেন এর এই সফলতার পেছনে উপজেলা কৃষি বিভাগ সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে।