হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে সরদার নিয়োগ নিয়ে দু’পক্ষের ভয়াবহ সংঘর্ষে পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে ইউপি চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান ধন মিয়ার গুলিবর্ষণে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। গতকাল সকালে উপজেলার সৈদরটুলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, উপজেলা সদরের সৈদরটুলা ছান্দের অধীন ৭টি মহল্লা রয়েছে। এ ছান্দের বেশকিছু জমি ও জলমহাল রয়েছে। আছে লক্ষ্মীবাউড় জলাবনও। এখানে অর্ধশতাধিক জলমহাল ও ধানের জমি রয়েছে। যা থেকে বছরে অন্তত ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা আয় হয়। তাই এ ছান্দের সরদার হওয়া নিয়ে অনেকেরই বেশ আগ্রহ থাকে। সরদার নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে দু’টি গ্রুপের মধ্যে দলাদলি ও উত্তেজনা বিরাজ করছিল। গত কয়েকমাস পূর্বে ছান্দের অধিকাংশ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে এডভোকেট নজরুল ইসলাম খানকে সরদার নিয়োগ করা হয়।
কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যানে হায়দারুজ্জামান খান ধন মিয়া ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এরপর থেকে ইউপি চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান ধন মিয়ার লোকজনের সঙ্গে এডভোকেট নজরুল ইসলাম ও ইকবাল বাহার খানের পক্ষের লোকজনের বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার সকালে উভয়পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে পুলিশসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে ইউপি চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান খান ধন মিয়া নিজের বন্দুক দিয়ে প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে ৮ থেকে ১০ রাউন্ড গুলি ছোড়েন। এতে স্থানীয় সংবাদকর্মীসহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ২৪ রাউন্ড টিয়ারশেল ও শতাধিক রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে গুরুতর আহত কয়েকজনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। গুলিতে আহত সংবাদকর্মী মাজহারুল ইসলাম অপু জানান, ঈদের এক সপ্তাহ পূর্ব থেকে দুর্ধর্ষ ধন মিয়া তার বন্দুক নিয়ে মহড়া দিয়ে আমাদের লোকজনকে গুলি করে হত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। এতে ভীত হয়ে এলাকাবাসী বানিয়াচং থানাকে লিখিতভাবে অবহিত করেছিলেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আজকে তার গুলিতে আহত হয়ে আমরা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি। অথচ প্রকাশ্যে সাধারণ মানুষের ওপর গুলি করেও ধন মিয়া এখনো গ্রেপ্তার হননি। এতে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ রঞ্জন দে জানান, টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ এপর্যন্ত ২০ জনকে আটক করে। জড়িত অন্যদের ধরতে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গুলি নিক্ষেপেরে ব্যাপারেও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।