সন্তানের বয়স মাত্র দুই বছর। স্বামীর দুটি কিডনিই বিকল। চিকিৎসকরা বলেছেন- অন্তত একটি কিডনি প্রতিস্থাপন না করা হলে যে কোনো সময় মৃত্যু হতে পারে তার। কেউ কিডনি দিতে রাজি হল না। স্বামীর মা (শাশুড়ি) সন্তানকে বাঁচাতে কিডনি দিতে ছুটে আসেন; কিন্তু কাজ হয়নি।
নিরুপায় হয়ে দুধের শিশুকে ফেলে স্ত্রী পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন স্বামীর কাছে। রক্তের গ্রুপ মিলে গেল। একটি কিডনি দিয়ে দিলেন স্বামীকে।
বিরল এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম হরিশপুর গ্রামের গৃহবধূ সেতু খাতুন। তার ইচ্ছা- বাঁচলে একসঙ্গে, মরলে একসঙ্গে মরব। বর্তমানে ঢাকার শ্যামলী সিকেডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এই দম্পতি।
উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম হরিশপুর। এ গ্রামেই জন্মে ছিলেন ফকির পাঞ্জু শাহ, লালন ফকির। ইতিহাস খ্যাত গ্রামটির আবদুল মালেকের ছেলে রাশিদুল ইসলাম। তিনি আনসার সদস্য। সাড়ে তিন বছর আগে রাশিদুলের সঙ্গে পাশের কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাতিভাঙ্গা গ্রামের হবিরর রহমানের মেয়ে সেতু খাতুনের বিয়ে হয়।
তিন মাস আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন রাশিদুল ইসলাম। তাকে স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত তার কিডনি সমস্যা ধরা পড়ে। খুলনার একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। পরীক্ষায় ধরা পড়ে দুইটি কিডনি বিকল হয়ে পড়েছে তার। কোনো চিকিৎসায় কাজ হবে না। দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে।
কিন্তু কিডনি কিনে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব না এই মধ্যবিত্ত পরিবারের। দিশেহারা হয়ে পড়েন তারা। কিন্তু রাশিদুল ইসলামের স্ত্রী সেতু খাতুনের সাফ জবাব বাঁচলে একসঙ্গে বাঁচব, মরলেও একসঙ্গে।
১২ নভেম্বর রাজধানীর শ্যামলীর সিকেডি কিডনি হাসপাতালে বিকাল ৪টার দিকে অপারেশন শুরু হয়। রাত ৯টার দিকে অপারেশন করে সেতুর একটি কিডনি সফলভাবে রাশিদুলের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। এখন স্বামী ও স্ত্রী দুইজনই সুস্থ আছেন।
সেতু খাতুন বলেন, পরিবার থেকে বিয়ে দিয়েছে। বিয়ের পর আমি স্বামীকে ভালোবাসি। ভালোবাসার সংসারে দুই বছর বয়সের একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। এত অল্প বয়সে আমার সন্তান তার বাবাকে হারাবে এটা হতে পারে না। তাই আমি একটি কিডনি দিয়েছি। স্বামী বেঁচে থাকবে। সন্তানের মুখে বাবা ডাক ফুটে উঠবে। এর চেয়ে খুশির খবর আর কিছু হতে পারে না।