আজিজুর রহমান দুলালঃ স্বপ্ন দেখাচ্ছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার কামারগ্রামে স্থাপিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)। আগামী ২৮ জুলাই ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন বলে সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে।
উদ্বোধনের পর প্রাথমিকভাবে বিদেশগামী কর্মীদের তিনদিনের প্রশিক্ষণ (পিডিও) কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলোর মাধ্যমে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজ ও কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমী সংলগ্ন জমিতে টিটিসি প্রকল্পে চারতলা দুটি ও তিনতলা একটি ভবনসহ বিভিন্ন নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ৭২ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত এই টিটিসি এখন শুধু উদ্বোধনের পালা।
প্রতিষ্ঠানটি ঘিরে আলফাডাঙ্গা উপজেলাবাসীর পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী বোয়ালমারী, মধুখালী, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী, নড়াইলের লোহাগড়া ও মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার তরুণ-তরুণীরাও স্বপ্ন দেখছেন।
সূত্রে জানা গেছে, প্রশিক্ষণ যন্ত্রপাতি আসার পর পর্যায়ক্রমে ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, আইটি সাপোর্ট টেকনিশিয়ান, অটোমেকানিক্স/ডিজেল ইঞ্জিন মেকানিক, সিভিল কন্সট্রাকশন, রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ার কন্ডিশনিং (আর এসি) ট্রেডের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে।
আলফাডাঙ্গা টিটিসির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহিনুর ইসলাম ঢকটক বলেন, ‘দেশে-বিদেশে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা মেটাবে এই টিটিসি। এতে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ নিয়ে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। যদি একজন মানুষ দক্ষ হয় তাহলে তার কাজের কোনো অভাব হয় না।’
শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘বিদেশে যাওয়ার জন্য অনেক ধরনের ট্রেনিং রয়েছে। টিটিসিতে যেকোনো একটি বিষয়ের ওপর কোর্স করলে বিদেশে গিয়ে কাজ করতে সুবিধা হবে। এছাড়া সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গেলে প্রতারিত হওয়ার সুযোগও কম থাকে।’
আলফাডাঙ্গার স্থানীয়রা বলছেন, টিটিসির কার্যক্রম শুরু হলে গোটা আলফাডাঙ্গার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি আসবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে। এই প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে তরুণদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘কামারগ্রাম টিটিসি শুধু এই উপজেলায়ই নয়, পাশের বিভিন্ন উপজেলাতেও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। আশপাশের জেলা থেকেও শিক্ষার্থীরা এখানে কারিগরি শিক্ষা নিতে আসবে।’
টিটিসির কার্যক্রম শুরু হলে গোটা আলফাডাঙ্গার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড একটা নতুন চেহারা পাবে বলে আশাবাদী পুলিশের সাবেক এআইজি মালিক খসরু। তিনি বলেন, ‘এই টিটিসি আলফাডাঙ্গাসহ আশপাশের উপজেলার তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।’
গোপালপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি খান আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘টিটিসির কার্যক্রম শুরু হলে এই অঞ্চলের মানুষের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এখানে শিক্ষার্থী ছাড়াও অন্যান্য লোকের সমাগম বাড়বে। এতে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ ফরিদপুর সফরে এসেছিলেন। তখন তিনি যেসব উন্নয়নকাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন, তার মধ্যে কামারগ্রামের টিটিসি একটি। এর মাসখানেকের মাথায় শুরু হয় প্রকল্পের কাজ।
টিটিসির তিনটি ভবনের একটি একাডেমিক, একটি ডরমিটরি, একটি প্রিন্সিপাল ও ভাইস প্রিন্সিপালের কোয়ার্টার ও ছাত্রী হোস্টেল। একাডেমিক ভবনটিতে ক্লাস হবে। ডরমিটরিতে থাকবেন ছাত্ররা। প্রিন্সিপালদের আবাসিক কোয়ার্টারের ওপরে ছাত্রীদের আবাসন ব্যবস্থা থাকবে।
আলফাডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) নির্মাণের জন্য জমি দিয়েছে কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমী। আলফাডাঙ্গাকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে উপজেলার মধ্যে সর্বপ্রথম ১৯৩৭ সালে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন মরহুম কাঞ্চন মুন্সী।
এছাড়াও কামারগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয়, ঈদগাহ, কবরস্থান, খেলার মাঠ, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা কাঞ্চন মুন্সীর দান করা জায়গায় স্থাপিত হয়েছে।
কাঞ্চন মুন্সী শুধু নিজ গ্রামেই নয়, আশপাশের শত শত বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করেছিলেন। তারই সুসন্তান মরহুম মুন্সী বজলার রহমান কাঞ্চন একাডেমীকে ৯০ শতাংশেরও বেশি জমি দান করেছিলেন। কাঞ্চন একাডেমির সেই জায়গায় নির্মিত হয়েছে টিটিসি।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ বলেন, ‘এই অঞ্চল এখন শহরের চেহারায় রূপ নিয়েছে। মরহুম কাঞ্চন মুন্সীর কল্যাণে গোটা অঞ্চল ঝলমলে এক জনপদে পরিণত হয়েছে।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম আকরাম হোসেন বলেন, ‘আলফাডাঙ্গার উন্নয়নে মুন্সী পরিবারের অবদান মানুষের মুখে মুখে। এই পরিবারের সুযোগ্য উত্তরসূরি কাঞ্চন মুন্সীর প্রপৌত্র আরিফুর রহমান দোলনের চেষ্টায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট, মসজিদ-মাদ্রাসা, কবরস্থান, মন্দিরসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামাগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এখনও হচ্ছে।’
আরিফুর রহমান দোলন এলাকার সুবিধা বঞ্চিত মানুষের ও এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করতে প্রপিতামহের নামে প্রতিষ্ঠা করেন সমাজ সেবামূলক সংস্থা ‘কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশন’। দোলনের একান্ত প্রচেষ্টায় আলফাডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিও স্বপ্ন থেকে বাস্তবে রূপ নিয়েছে। তিনি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ করে প্রতিষ্ঠানটি কামারগ্রামে এনেছেন।
যোগাযোগ করা হলে ২নং গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইনামুল হাসান বলেন, ‘এই আলফাডাঙ্গায় সর্বপ্রথম শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছিলেন মরহুম কাঞ্চন মুন্সী। তারই উত্তরসূরি আরিফুর রহমান দোলন প্রপিতামহের দেখানো পথে হাঁটছেন। তিনিই দৌড়ঝাঁপ করে কামারগ্রামে এই টিটিসি বরাদ্দ এনেছেন। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ।’
গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোনায়েম খান বলেন, ‘এলাকার শত শত বেকার তরুণ-তরুণী এই টিটিসি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারবে। বিভিন্ন জায়গায় কাজের সুযোগ পাবে। বিদেশে গিয়ে এসির মধ্যে বসে কাজ করত।