আবু তালহা, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে বেইসড প্লেয়িং এক্সসরিজ প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলনাসামগ্রী স্থাপন করা হয়েছে। যাতে শিক্ষার পরিবেশ ও বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ শিশুদের মধ্যে যেন বিদ্যালয়ে আসার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তবে এ সকল খেলাধুলা সামগ্রী স্থাপনের দু’মাস না পেরোতেই ব্যালেন্সিং যন্ত্র গুলো ভেঙ্গে গেছে ল্যাডার ও দোলনার খুঁটিগুলো নড়বড়ে অবস্থা যেকোনো সময় ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে অপরিকল্পিতভাবে এসব সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে যার ফলে খেলাধুলা করতে পারছেনা শিশুরা।
প্রকল্পের এই কাজের মান নিয়ে অনেক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা অসন্তুষ্ট। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে নিম্নমানের কাজ করিয়েছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বলে জানাগেছে। অনেক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দাবি তারা এই বাজেটের টাকা দিয়ে নিজেরাই খেলাধুলার সামগ্রী স্থাপন করতে চেয়েছিল তবে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস তাদের হাতে কাজ না দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে নিম্নমানের কাজ করিয়েছে। এছাড়াও কয়েকটি বিদ্যালয় বাজেটের টাকা নিয়ে তারা নিজেরাই খেলাধুলার সামগ্রী স্থাপন করেছে সেগুলোরও একই দশা। তবে কয়েকটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন তারা বলছেন যা বাজেট দিয়েছে তার মধ্যে থেকে বেশ কিছু টাকা ভ্যাট কেটে নিয়েছে বাদবাকি টাকা দিয়ে এর থেকে ভালো কাজ করা সম্ভব না।
সরকার ২০২১-২২ অর্থ বছরে বেইসড প্লেয়িং এক্সসরিজ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উপজেলার ১০ টি বিদ্যালয়ে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়। সেই বরাদ্দের টাকা দিয়ে খেলনাসামগ্রী হিসেবে স্লিপার, দোলনা, ব্যালান্সিং যন্ত্র স্থাপন করা হয়। যাতে করে বিদ্যালয়গুলো হয়ে ওঠেছিল মিনি শিশু পার্ক করোনার রেশকাটিয়ে শিশুরাও আগ্রহভরে আসতে শুরু করেছিল স্কুলে। কিন্তু অল্পদিনেই খেলা-ধুলা সামগ্রী গুলোর এমন দশা দেখে হতাশা প্রকাশ করেছে অভিভাবকরা। এছাড়াও গত জুনে বরাদ্দ হয় আরো ১২ হাজার টাকা করে যা শিশুদের খেলনা কেনার জন্য। সেই টাকা দিয়ে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে কোন খেলাধুলার সামগ্রী ক্রয় করা হয় নাই।
প্লেয়িং বরাদ্দ নিয়ে উপজেলার বাঁশবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, খেলাধুলা সরঞ্জাম স্থাপনের জন্য আমাদেরকে যে বাজেট দেওয়া হয়েছিল সেটা উপজেলা শিক্ষা অফিস টেন্ডার দিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করিয়েছে। আপনারা তো কাজের মান কেমন হয়েছে দেখতেই পাচ্ছেন দু’মাস না পেরোতেই এমন বেহাল অবস্থা হয়েছে এতে আমরা সন্তুষ্ট না। বরাদ্দের টাকাটা আমাদের হাতে দিলে এর থেকে ভালো কাজ করতে পারতাম।
এছাড়াও সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার মধু নান্দিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আরো বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে একই অবস্থা দেখা গেছে। এরমধ্যে চালা প্রাথমিক বিদ্যালয় তারা নিজেরাই বরাদ্দের টাকা দিয়ে কাজ করেছে বলে দাবি করেন। তারপরও ব্যালেন্সিং যন্ত্র ভেঙ্গে গেছে বাদবাকি সরঞ্জাম গুলোরও নড়বড়ে অবস্থা। এরমধ্যে কিছুটা ভালো অবস্থায় রয়েছে ধনেশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলাধুলার যন্ত্রগুলো তবে এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মল্লিকা বিশ্বাস কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তিনি বলেন শিক্ষা অফিসে অনুমতি নিয়ে আপনাদের সাথে কথা বলবো! প্রতিবেদক এর উপস্থিতিতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন ।
এ বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সন্ধ্যা রানী সাহার সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারবনা। প্রতিটা স্কুল নিজেরাই কাজ করেছে কাজে কোন সমস্যা থাকলে নিউজ করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেরিনা সুলতানা বলেন, আমি সরজমিনে গিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিব। বিষয়গুলো নিয়ে মিটিং এ কথাও হয়েছে অভিযোগও পেয়েছি। এছাড়াও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সন্ধ্যারানী সাহার বিরুদ্ধে এলিগেশন নোটিশও পেয়েছি।