অর্থনৈতিকভাবে দুর্দশাগ্রস্ত তিউনিসিয়ায় সহায়তার জন্য সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরম আমিরাতের সাথে আলোচনা করছে তিউনিসিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংক।
তিউনিসিয়ার স্থানীয় শামস এফএম রেডিওর কাছে শুক্রবার দেয়া এক সাক্ষাতকারে এই তথ্য জানান ব্যাংকের ফিনান্সিং অ্যান্ড ফরেন ট্রান্সজেকশনের প্রধান আবদুল করিম লাসুইদ।
সাক্ষাতকারে তিনি আশা প্রকাশ করেন, দুই দেশের সাথে আলোচনার পর শিগগিরই সহায়তার বিষয়ে চুক্তি হবে।
তিনি জানান, পাশাপাশি অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) সাথে আলোচনা চলছে।
তবে কি পরিমাণ অর্থ সহায়তার জন্য আলোচনা চলছে, তা বিস্তারিত জানাননি তিনি।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর তিউনিসিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মারওয়ান আব্বাসি জানান, দেশটিতে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের সমাধানে ‘তিউনিসিয়ার বন্ধু কিছু দেশ’ সহায়তা করবে।
তখন তিনি কোনো দেশের নাম না বললেও ধারণা করে নেয়া হয়েছিলো, প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদকে সমর্থন করা সৌদি আরবসহ পারস্য উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলো এই সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
চলতি বছর তিউনিসিয়ার বিদেশী ঋণ পরিশোধ এবং সরকারি খাতের হাজার হাজার কর্মচারীর বেতনভাতা মেটাতে অন্তত ৩.৫ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন।
গত ২৫ জুলাই করোনা পরিস্থিতিতে তিউনিসিয়ায় সৃষ্ট দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় জেরে আকস্মিক সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর রাতে প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ দুই বছর আগে নির্বাচিত পার্লামেন্ট ৩০ দিনের জন্য স্থগিত, প্রধানমন্ত্রী হিশাম মাশিশিকে বরখাস্ত ও দেশের নির্বাহী ক্ষমতা নিজের হাতে নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আদেশ জারি করেন।
পরে ২৩ আগস্ট ‘রাষ্ট্রের জন্য হুমকি’ বিবেচনায় পরবর্তী আদেশ দেয়া না পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত রাখার আদেশ দেন প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ।
অপরদিকে ২২ সেপ্টেম্বর জারি করা এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধানের কিছু অংশ স্থগিত করার মাধ্যমে নিজের ক্ষমতা জোরদার করেন সাইদ।
তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক দলগুলো এই আদেশকে ‘সাংবিধানিক অভ্যুত্থান’ বলে অভিযোগ করে আসছে।
২৬ জুলাই দেশটির বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আননাহদার প্রধান ও পার্লামেন্ট স্পিকার রশিদ গানুশিসহ দলীয় পার্লামেন্ট সদস্য ও সমর্থকরা রাজধানী তিউনিসে পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। অপরদিকে প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদের সমর্থকরাও পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হন। এই সময় দুই পক্ষের মধ্যে পরস্পরের প্রতি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ। একইসাথে তিনজনের বেশি লোককে প্রকাশ্যে জমায়েত হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিলো।
এছাড়া বেশ কিছু মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেন কায়েস সাইদ। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে দেশটিতে গৃহবন্দী করা হয়েছে।
তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক দলগুলো প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদের এসব পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে দেশটিতে স্বৈরাচারী শাসন ফিরে আসার শঙ্কায় আছেন।
এর মধ্যে ২৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীকে বহিস্কার ও পার্লামেন্ট স্থগিতের দুই মাস পর নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন কায়েস সাইদ। ভূতত্ত্ববিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক নাজলা বুউদেন রমাদানকে তিউনিসিয়ার প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট সাইদ।
পরে ১১ অক্টোবর নাজলা বুউদেন রমাদানের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন করা হয়।
২০১১ সালে আরব বসন্তের সূচনাকারী দেশ তিউনিসিয়ায় স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের জেরে ২৪ বছর দেশটি শাসন করা একনায়ক জাইন আল আবেদীন বিন আলী ক্ষমতাচ্যুৎ হন। এর পর থেকেই গত দশ বছর ভঙ্গুর অবস্থা সত্ত্বেও আরব বিশ্বের একমাত্র গণতান্ত্রিক শাসন উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে চালু ছিলো।
সূত্র : মিডল ইস্ট আই