মাত্র সাড়ে ১৬ লাখ টাকার জন্য শহীদুল ইসলাম নামে সৌদিপ্রবাসীর মৃতদেহ দাফন করা যাচ্ছে না। বিল পরিশোধ না করায় সৌদি আরবের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মর্গ থেকে দাফনের জন্য লাশ ছাড়ছে না। এ অবস্থায় মৃত্যুর ১৬ দিন পরও লাশটি পড়ে আছে মর্গে।
মর্মান্তিক এই ঘটনায় সৌদিপ্রবাসীর নিজ বাড়ি চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নে ১৬ দিন ধরে চলছে কান্নার রোল। মারা যাওয়ার পরও এখন পর্যন্ত দাফন করতে না পারায় প্রবাসে থাকা তার বন্ধু-স্বজনরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন।
জানতে চাইলে সৌদি আরব থেকে হোয়াটসঅ্যাপে শহীদুলের বড় ভাই মোজাম্মেল হক বলেন, মৃত্যুর পর আমরা প্রতিদিন হাসপাতালে যোগাযোগ করে শহীদুলের পরিবারের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে লাশটি ছাড় করার জন্য অনুরোধ করছি। কিন্তু বিল পরিশোধ না করলে তারা লাশ ছাড় দিবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার রিয়েল জমা দিয়েছি। এখন আমাদের কাছে এমন আর্থিক অবস্থা নেই যে এত টাকা পরিশোধ করে লাশ নিয়ে আসব।
শহীদুলের পরিবারের স্বজনরা জানান, ২০০৪ সাল থেকে সৌদি আরবে বৈধ ভিসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করছেন শহীদুল। দেশে পরিবারে তার তিন মেয়ে ও স্ত্রী এবং মা রয়েছে। তিন মাস থাকার পর সর্বশেষ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর তিনি সৌদি আরবের কর্মস্থলে চলে যান। কর্মরত অবস্থায় গত ২ আগস্ট হঠাৎ তার শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে বন্ধু-বান্ধবরা মিলে তাকে স্থানীয় আসির এলাকার সৌদি-জার্মান হাসপাতাল-এ ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৫ আগস্ট মারা যান শহীদুল ইসলাম।
এরপর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে সৌদি আরবে থাকা তার স্বজনরা শহীদুলকে সৌদি আরবেই দাফনের সিদ্ধান্তের কথা লিখিতভাবে জানান। কিন্তু সৌদি-জার্মান হাসপাতালে তার চিকিৎসার বিল আসে ৮৭ হাজার ৯৫০ সৌদি রিয়াল। এর মধ্যে ১৫ হাজার সৌদি রিয়াল চিকিৎসার সময় জমা দেয় শহীদুলের পরিবার। বাকি ৭২ হাজার ৯৫০ সৌদি রিয়াল বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ টাকা দিতে না পারায় মর্গ থেকে লাশটি ছাড় করছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই অবস্থায় গত ১৫ আগস্ট থেকে আজ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত লাশটি হাসপাতালে পড়ে আছে।
শহীদুলের বাড়ি কাকারা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। তার বড় ভাই মোহাম্মদ সেলিম কালের কণ্ঠকে বলেন, আমদের কতটা দুভার্গ্য যে মারা যাওয়ার পর লাশটি এখনও দাফন করতে পারলাম না! তার তিন মেয়ের মধ্যে ছোট্ট মেয়েটি মাত্র এক মাস বয়সী। বড় মেয়েটি ৬ বছরের। পরিবারের সদস্যদের কান্না কখনো থামবে কি-না জানি না।
কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত ওসমান কালের কণ্ঠকে বলেন, পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী শহীদুলের দাফন সৌদি আরবে সম্পন্ন করার জন্য আমি আবেদনে স্বাক্ষর করেছি। আমি প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী মহোদয় এবং ওয়েজ আনার্স বোর্ডের কাছে আবেদন জানাচ্ছি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সরকারি তহবিল থেকে টাকা দিয়ে যাতে দ্রুত লাশটি দাফন করা যায়।
উৎসঃ কালের কণ্ঠ