বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নতুনবাজার এলাকায় রামনগর ভাড়ানি খালের ওপর নির্মিত সেতুতে চলাচলের জন্য সংযোগ সড়কের পরিবর্তে সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে। ওই সেতু দিয়ে কোনো যানবাহন পারাপার হতে পারে না। প্রায় পাঁচ ফুট উঁচু সিঁড়ি দিয়ে লোকজন ওঠানামা করে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, যানবাহন চলাচল না করায় এই সেতু তেমন কাজে লাগছে না। সেতু পারাপার হতে মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ-শিশুরা বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে।
হাসান খান নামের একজন বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এ রামনগর ভাড়ানি খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণের। কিন্তু সেই সেতু নির্মাণ হলেও দুর্ভোগ কমেনি। সংযোগ সড়কের বদলে উঁচু সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে গিয়ে মানুষের দুর্ভোগ-ভোগান্তি বেড়েছে। সেতু হলেও এর ওপর দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিতেও পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। সরকারের এত অর্থ ব্যয় করে সেতু হলেও তা উপকারে আসেনি বরং দুর্ভোগের কারণ হয়েছে।’
সেতুটির নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বাকেরগঞ্জ উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলীরা বলছেন, দুই পাড়ে সংযোগ সড়ক করার জন্য জায়গা না থাকায় ওঠানামার জন্য এ ধরনের সিঁড়ি করা হয়েছে। এর বিকল্প ছিল না।
এলজিইডি সূত্র জানায়, বরিশালের বাকেরগঞ্জ থেকে বরগুনার বেতাগী উপজেলায় যেতে আঞ্চলিক মহাসড়কের চামটা নতুন বাজার এলাকায় রামনগর খালের ওপর ২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণকাজ শেষ হয় মাস খানেক আগে। লোহার অবকাঠামোর ওপর সিমেন্টের তৈরি এ সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে। ৫৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে এ সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ পায় স্থানীয় এমএস রুপালী কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সেতুটির দক্ষিণপাড়ে বাকেরগঞ্জ থেকে নিয়ামতি হয়ে বরগুনার বেতাগী উপজেলার আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং উত্তরপাড়ে রামনগর সড়ক। উত্তরপাড়ের সড়কটি রামনগর হয়ে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মোল্লার হাটের গিয়ে মিলিত হয়েছে। রামনগর, কাফিলা, মোল্লার হাট, তালতলাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ এ সেতু দিয়ে নিয়মিত বাকেরগঞ্জ উপজেলা সদরে যাতায়াত করেন। সেতুটি দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় দেড় কিলোমিটার ঘুরে মহেশপুর বাজার হয়ে যাতায়াত করতে হয়।
রামনগর এলাকার বাসিন্দা মজিবুর রহমান গাজী বলেন, ‘রামনগর ভাড়ানি খালে সেতু নির্মাণ হচ্ছে দেখে ভেবেছিলাম আমাদের দুঃখ ঘুচবে। কিন্তু সেতুটি এমনভাবে নির্মাণ হয়েছে তাতে সব আশাই নিরাশায় পরিণত হয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে সেতুতে ওঠানামা করতে খুব কষ্ট হয়। ছোটবড় কোনো যানবাহন পারাপার হতে পারে না। সেতুটি কোনো উপকারে আসছে না।’
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আবুল খায়ের মিয়া বলেন, সেতুর দুপারে সংযোগ সড়ক করার মতো কোনো জায়গা ছিল না। তাই বিকল্প হিসেবে সিঁড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।
উৎসঃ প্রথম আলো