বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য রয়েছে ২২ শয্যার আইসিইউ ওয়ার্ড। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এ কারণে আইসিইউ শয্যা পেতে প্রয়োজন হয় প্রভাবশালী কিংবা ভিআইপিদের সুপারিশ। সুপারিশ ছাড়া মেলে না আইসিইউ শয্যা।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, করোনায় আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের প্রয়োজন অনুসারে আইসিইউ শয্যা দেওয়া হচ্ছে। আইসিইউ শয্যা সীমিত হওয়ায় চাইলেও অনেক রোগীকে শয্যা দেওয়া যায় না। তবে হাসপাতালে চালু রয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম। পাশাপাশি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ও বোতলজাত অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। এসব সুবিধা পাচ্ছেন রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত বছরের মার্চ মাসে হাসপাতালের পুরাতন ভবনে করোনা ওয়ার্ডের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে আইসিইউতে কেবল মুমূর্ষু করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হতো। তখন হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা ছিল ১২টি। এরপর মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি করে শুধু করোনা রোগীদের জন্য ২২টি আইসিইউ শয্যার ব্যবস্থা করা হয়।
সম্প্রতি হাসপাতালের নতুন ভবনের তিন তলায় আইসিইউ ওয়ার্ড তৈরি করে ২২টি শয্যা স্থাপন করা হয়। এরই মধ্যে সব শয্যা রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। সেখানে আরও পাঁচটি আইসিইউ শয্যা স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। তবে পুরাতন ভবনের ১২টি আইসিইউ শয্যা এখন সাধারণ রোগীরা ব্যবহার করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইসিইউ ওয়ার্ডে কর্মরত নার্সরা জানান, করোনা রোগীদের জন্য অর্ধশতাধিক আইসিইউ শয্যার চাহিদা রয়েছে। এত সংখ্যক আইসিইউ শয্যা না থাকায় যারা মুমূর্ষু কেবল তাদের দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে সুপারিশ লাগে। সুপারিশ ছাড়া আইসিইউ পাওয়া যায় না।
নার্সরা আরও জানান, আইসিইউ শয্যায় একজন রোগী তিন-চার দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান। কিন্তু এরপরও শয্যা ছাড়তে চান না। ছাড়পত্র দিলে বিভিন্ন মাধ্যমে সুপারিশ করে আইসিইউ শয্যা দখলে রাখেন। করোনা ওয়ার্ডে যারা আসেন তাদের অধিকাংশই আইসিইউ শয্যা চাওয়ায় সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এজন্য মুমূর্ষু করোনা রোগীরাও আইসিইউ বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এসএম মনিরুজ্জামান শাহিন বলেন, করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই আইসিইউ শয্যাসহ সব ধরনের চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন রোগীরা। বর্তমানে রেকর্ড সংখ্যক রোগী করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আইসিইউ ওয়ার্ডের সব শয্যায় রোগী রয়েছেন। তবে আইসিইউ শয্যা পেতে সুপারিশ লাগার অভিযোগ কেউ কেউ করতে পারেন- বলেই বিষয়টি এড়িয়ে যান ডা. এসএম মনিরুজ্জামান।
তিনি বলেন, বর্তমানে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন ২৩৬ রোগী। এর আগে ১ জুলাই রোগী ভর্তি ছিল ১৪৮ জন এবং ৫ জুলাই ২২০ জন। বর্তমানে রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় আরও ৫০ শয্যা বাড়ানো হয়েছে। ওসব শয্যায় এখনও সেন্ট্রাল অক্সিজেনের লাইন দেওয়া সম্ভব হয়নি। সেখানে বোতলজাত অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের লাইন দেওয়ারও কাজ চলছে।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
সহকারী পরিচালক আরও বলেন, বর্তমানে করোনা ওয়ার্ডে ২৫০ রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০ শয্যার সঙ্গে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা রয়েছে। এতে করে আইসিইউ শয্যার প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে। হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে ৪০ হাজার লিটার অক্সিজেন ধারণক্ষমতার সিলিন্ডার রয়েছে। সিলিন্ডার সবসময় ভরে রাখা হয়। রোগীদের জন্য হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা চালু আছে ২২টি। আরও ২২টি সংযোজনের কাজ চলছে। এতে করে রোগীদের অক্সিজেনের সংকট হবে না।
প্রসঙ্গত, গত বছর মার্চ মাসে করোনার প্রকোপ দেখা দিলে তড়িঘড়ি করে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পাঁচ তলা ভবনে ২০ শয্যার করোনা ওয়ার্ড গড়ে তোলা হয়। পরবর্তী সময়ে তা ১৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এরপর আবার বাড়িয়ে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। করোনা রোগীর চাপ বাড়লে শয্যার সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক।
এদিকে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় দুই জন পজিটিভ রোগীসহ নয় জন মারা গেছেন। করোনা শনাক্তের হার ৭৩.৯৩ শতাংশ। মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের পরিচালক কার্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় দফতরে পাঠানো প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।