বাংলা এক্সপ্রেস ডেস্কঃ স্বল্প পরিসরে হলেও করোনা ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’ ঘটে গেছে সিলেটে। সবখানেই মিলছে রোগী। মৃত্যুর মিছিলও বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে যেমনি আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ জন তেমনি মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। ফলে করোনা নিয়ে সিলেটে উৎকণ্ঠায় স্বাস্থ্য বিভাগ। শহরের অনেক জায়গায় দোকানপাট খোলা। ভিড় ঠেলেই হচ্ছে ঈদ শপিং। মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের ভিড়।
সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ছে। এই পরিবেশ করোনা কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের উত্তমপন্থা বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। আর তাই ঘটছে সিলেটে। ফলে এখনই লাগাম টেনে না ধরলে সিলেটকে করোনা ছোবল থেকে রক্ষা করা কষ্টকর হবে। এজন্য ‘কারফিউ’ জারির ওপর তাগিদ দেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন- পুরোপুরি ১৪ দিন সিলেটকে বিচ্ছিন্ন করে না রাখলে এ অবস্থা উত্তরণের কোনো সুযোগ নেই।
সিলেটে এখন দুটো পিসিআর ল্যাবে করোনা নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর মধ্যে বুধবার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। দুটি ল্যাবের পরীক্ষার রেজাল্ট মধ্যরাতের দিকে আসে। এতে দেখা গেছে- ২৭০ টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৫ জন পজেটিভ মিলেছে। এর মধ্যে ওসমানীর ল্যাবে এসে ২২ জন পজেটিভ ও শাবির ল্যাবে ২৩ জন পজেটিভ। পজেটিভ ৪৫ জনের মধ্যে ৪০ জনই সিলেট জেলার বাসিন্দা। এবং তারা করোনার উপসর্গ নিয়ে এসে হাসপাতালে আসায় তাদের করোনা টেস্ট করা হয়। স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বশেষ তথ্য মতে- সিলেটে এখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২২৫ জন। আর বিভাগে এই সংখ্যা ৪৯৯ জন। বৃহস্পতিবারের ফলাফল বিকেল পর্যন্ত জানা যায়নি। ফলে ধারনা করা হচ্ছে- সিলেটে এই পরিসংখ্যানের বাইরে আরো করোনা রোগী রয়েছেন। সিলেটে করোনার এই পরিসংখ্যান ভাবিয়ে তোলেছে সবাইকে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান- শুধু যে রোগী বাড়ছে তা নয়, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিলও। ২৪ ঘন্টায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবুল কাশেম নামের বিয়ানীবাজারের এক সাবেক মেম্বার। তিনি স্থানীয় আছিরগঞ্জ বাজারে ফার্মেসীর ব্যবসা করতেন। এবং গ্রামীণ এলাকার রোগীদের প্রাথমিক সেবা দিতেন। রোগী দ্বারা আক্রান্ত হয়েই তিনি মারা গেছেন বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন। কারন- তিনি গ্রামের রোগীদের ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতেন। এছাড়া সিলেটের উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকা আরো এক করোনা রোগী মারা গেছেন।
সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় করোনায় মারা গেছেন আরো এক রোগী। একদিনে তিন রোগীর মৃত্যুও ভাবিয়ে তুলেছে চিকিৎসকদের। সিলেটে করোনার জন্য আইসোলেশন সেন্টার হচ্ছে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। এই হাসপাতালে প্রায় ৪০ জন করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন। তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালে সর্বোচ্চ ১০০ জন করোনা রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন আবাসিক চিকিৎসক সুশান্ত কুমার মহাপাত্র।
তিনি জানান- রোগী যারা ভর্তি হচ্ছে তারা প্রায় সবাই সুস্থ হয়ে উঠছেন। এর মধ্যে যে ক’জন হাসপাতালে এসে মারা গেছে তাদের চিকিৎসা প্রদানের সুযোগ মিলেনি। যেমন- আবুল কাশেম নামের যে রোগী মারা গেছেন তিনি ভর্তি হন রাত সাড়ে ১০ টায়। এরপর রাত আড়াইটার দিকে মারা যান। সুতরাং অনেকেই অন্তিম সময়ে হাসপাতালে এসে মারা যান। তারা আগে এলে চিকিৎসা দেওয়া যেতো। সিলেটের অনেকেই মনে করছেন করোনার চাষ হচ্ছে সিলেটে। যে হারে মানুষ মার্কেটিং, বাজারে নেমেছে- তা দেখে বিচলিত সবাই। কিন্তু দেখার কেউ নেই, মানারও কেউ নেই। ঈদে সিলেটের মার্কেট বন্ধ রাখতে তিনি সহ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও চেম্বার সভাপতি এটিইউ শোয়েব উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু বৈঠক করেই তাদের দায় শেষ। এরপর ঘোষনা দিয়েই সিলেটের হাসান ও হকার মার্কেট খোলেছেন ব্যবসায়ীরা। বলতে গেলে- সিলেটের বেশির ভাগ দোকানপাটই এখন খোলা ঈদ মার্কেটিংও হচ্ছে। মানুষের ভিড়ও বেশি। এই অবস্থার লাগাম টেনে ধরতে হলে সিলেটে ১৫ দিনের পুরোপুরি লকডাউন প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সহকারী পরিচালক (রোগতত্ব ও নির্নয়) আনিসুর রহমান। তিনি জানান- ১০ দিনের লকডাউন হলেও হবে না। পুরো ১৫ দিন সিলেটকে বিচ্ছিন্ন রাখতে পারলে করোনা নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। নতুন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলবে বলে মনে করেন তিনি।