আবু তালহা, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের শীত পাটির চাহিদা বহুবছর ধরে দেশব্যাপী সমাদৃত রয়েছে। এক সময় লোকশিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল পাটি শিল্প। পাটি বেত কেটে তা সিদ্ধ বা শুকিয়ে বুনানো হয় পাটি। গরমের দিনে এই পাটি ব্যবহারে স্বস্তির নি:শ্বাস বা দেহমন ঠান্ডা হয় বলেই একে শীতল পাটি বলা হয়। এই পাটি তৈরিতে পুরুষের পাশাপাশি বড় ভূমিকা রাখে নারী কারিগররা। তবে শীতল পাটি বুনে নারী শিল্পীরা যে টাকা মজুরী পান তার সংখ্যা অতি নগন্য।
সরেজমিনে কামারখন্দ উপজেলার ঝাঐল ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, পুরুষরা জমি থেকে পাটি বেত কেটে আনছেন। পরে সেগুলো বিশেষ দা দিয়ে এক ধরনর বেতী সূতা বানিয়ে সেগুলো সিদ্ধ করে রোদে শুকানো হচ্ছে। বেতী সূতাগুলো রোদে শুকানোর পর তাতে নানা বাহারী রং দেয়ার পর আবার রোদে শুকানো হচ্ছে। বেতী সূতা রোদে শুকানোর পর নারী শিল্পীরা নিপূণ হাতে তৈরী করছে শীতল পাটি।
জানা যায়, বর্তমান আধুনিতার ছোয়ায় এ পাটির পরিবর্তে এখন প্লাস্টিক পাটি, চট-কার্পেট, মোটা পলিথিন সহ বিভিন্ন উপকরণ স্থান দখল করে নিয়েছে। শীতল পাটির বুনন ও চাহিদা কমলেও চাঁদপুর গ্রামের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর নারীরা শত কষ্টেও তাদের পূর্বপুরুষদের প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। এ গ্রামের ২০০ পরিবারের প্রায় ৮০০ নারী-পুরুষ তাদের জাত পেশা হওয়ায় এখনও টিকিয়ে রেখেছেন এ শিল্প। বর্তমানে প্রতিটি শীতল পাটি প্রকার ভেদে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চাঁদপুর গ্রামের ষাটোর্ধ বৃদ্ধা পাটি তৈরীর শিল্পী বানি দত্ত জানান, শীতল পাটির দাম অনেকটা বাড়লেও আমাদের মজুরী বাড়েনি। পাটি ক্ষেত্রে ১৬০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০ টাকা পর্যন্ত পাই। একটি পাটি বুনতে দুই থেকে তিনদিন সময় লাগে। প্রতিটি পাটি মহাজনেরা ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে থাকেন। একটা পাটি বুনতে যে পরিশ্রম আর সময় লাগে সে হিসেবে আমাদের মজুরী অনেক কম।
একই গ্রামের শীতল পাটি তৈরির নারী শিল্পী সোহাগী, অনিতা, সিথী রানী, রাত্রী ও বৃষ্টি বলেন, শীতল পাটির টাকায় তাদের সংসার চলে। শীতল পাটির দাম বাড়লেও তাদের মজুরি বাড়াননি মহাজনেরা। সংসার বাঁচাতে অনেকটা বাধ্য হয়ে এই পেশায় পড়ে রয়েছে বলে জানান তারা। পাটির আকার অনুযায়ী ১৬০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০ টাকা পর্যন্ত তারা মজুরি পান। বর্তমান যুগে ভোগ্যপণ্যের যে বাজারদর প্রাপ্ত মজুরি দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান তারা।
একই গ্রামের শীতল পাটি ব্যবসায়ী ও শিল্পী বিল্লু চদ্র দাস জানান, পূর্ব পুরুষরা এ পেশাই করতো। তাই ছোট বেলা থেকে এ পেশা করে আসছি। শীতল পাটি আগের মত ব্যবহার না হওয়ায় ক্রেতার সংখ্যার পাশাপাশি পাটির দামও অনেকাংশে কমে গেছে। তাই নারী শিল্পীদের মজুরিও খুব একটা বাড়াতে পারছি না।
কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেরিনা সুলতানা বলেন, চাঁদপুর গ্রামের শীতল পাটি পল্লীতে বহু বছর আগে থেকেই পুরুষদের পাশাপাশি নারী শিল্পীরা পাটি তৈরীর কাজে জড়িত আছে। তাদের নানাভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে আরও উন্নতমানের শীতল পাটি তৈরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।