আবু তালহা, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে রায়দৌলতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগে পরীক্ষার আগেই প্রার্থী চূড়ান্ত করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রার্থী চূড়ান্ত করেই তার পর নেওয়া হয়েছে নিয়োগ পরীক্ষা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, নিয়োগের সকল নিয়ম মেনেই পরীক্ষার জন্য বৃহস্পতিবার প্রার্থীদের ডাকা হয়েছিল।
সরেজমিনে গেলে বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়
১০ অক্টোবর ২০২১ সালে স্থানীয় ও জাতীয় দুটি দৈনিক পত্রিকায় এই নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সহকারী প্রধান শিক্ষক, নৈশ প্রহরী,পরিচ্ছন্নতা কর্মী, অফিস সহায়ক ও আয়া পদে বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগের কথা বলা হলেও পরীক্ষা নেয়া হয়েছে তিনটি পদে। পদ গুলো হচ্ছে সহকারী প্রধান শিক্ষক, নৈশ প্রহরী ও আয়া । তিনটি পদে মোট ১৯ জন প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন।
নৈশ প্রহরী পদে আবেদন করা আব্দুল্লাহর অভিযোগ, তিনি নৈশ প্রহরী পদে আবেদন করে বিদ্যালয়ের সভাপতি জয়নাল আবেদিন ও নিয়োগ কমিটির সদস্য ছানোয়ার হোসেন প্রামানিকের কাছে দেড় লাখ টাকা দিয়েছেন। পরে অন্য একজনের সঙ্গে আরও বেশি টাকায় দফারফা হওয়ায় তার আবেদনটি বাতিল করা হয়। তবে অগ্রিম নেওয়া টাকা তারা এখনও ফেরত দেয়নি বলে তিনি জানান।
আব্দুল্লাহ অগ্রিম দেওয়ার টাকা ফেরত চাইতে গেলে তাকে ব্যাপকভবে
মারধর করেন সভাপতির ছেলে আবু হানিফ মারধরের চিত্র সাংবাদিক মোবাইলে ধারন করলে সাংবাদিকের হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নেয় এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন ।
আব্দুল্লাহর আরও অভিযোগ, তিনটি পদের নিয়োগেই মোটা অঙ্কের টাকার লেনদেন হয়েছে।
এদিকে মাস্টাররোলে আয়া পদে কর্মরত শাহিদা বেগম মুঠোফোনে জানান, দীর্ঘ ১৪ বছর ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। নিয়োগ হলে তিনিই প্রাধান্য পাবেন, বরাবরই এমন কথা বলে এসেছে প্রধান শিক্ষক। কিন্তু নিয়োগের সময় পরিচালনা কমিটির একজনের আত্মীয়কে নিয়োগ দেওয়ার জন্য তার বিষয়টি আর বিবেচনায় আনা হয়নি। উপরন্তু মাস্টাররোল বাতিল করে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে তাদের কাছে পাওয়া একটি অডিও রেকর্ড থেকে শোনা যায়, নিয়োগ কমিটির সদস্য ছানোয়ার হোসেন স্বীকার করেছেন, তিনিসহ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে একজন প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তবে অজ্ঞাত কারণে তাকে আবার বাতিলও করা হয়েছে। সে টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও, কবে ফেরত দেবেন সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কোন তারিখ বলেননি তিনি ।
অডিও রেকর্ডে আরও শোনা গেছে, পুরো বিষয়টি বিদ্যালয়ের সভাপতি জানেন। তার সঙ্গে কথা বললেই এর সমাধান পাওয়া যাবে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি জয়নাল আবেদিন মানবকণ্ঠ’কে জানান, প্রতিটি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু টাকা খরচ হয়। তাই প্রার্থীদের কাছ থেকেই অল্প কিছু খরচের টাকা নেওয়া হয়ে থাকে। তাছাড়া মোটা অঙ্কের কোন অর্থ নেয়া হয়নি। যে প্রার্থী গুলো নিয়োগ পাইনা তারা এমনটা বলবেই।
অপরদিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সারোয়ার হোসেন জানান, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। যারা লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করেছেন তারাই নিয়োগ পেয়েছে। আর নিয়োগ সংক্রান্ত টাকা পয়সার কোন লেনদেন হয়েছে কিনা, তা তিনি জানেন না।
এ প্রসঙ্গে ডিজির প্রতিনিধি সালেহা ইসহাক সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আফসার আলী বলেন, নিয়োগ নিয়ে অর্থ নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আমি নিজে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করে ফলাফল ঘোষণা করেছি।
স্থানীয়দের অভিযোগের বিষয়ে কামারখন্দ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাকমান আলী বলেন, নিয়োগের জন্য প্রার্থীরা কারো সঙ্গে টাকা-পয়সার লেনদেন করেছেন কিনা, তা জানিনা। এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগও দেয়নি। আর অফিস ম্যানেজ করার কোন সুযোগ নেই। স্বচ্ছভাবেই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন।
তবে দিন শেষে পাতানো নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলে তিন জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এরা হলেন, সকারী প্রধান শিক্ষক পদে রফিকুল ইসলাম, নৈশ প্রহরী পদে লিখন শেখ ও আয়া পদে লাবণী খাতুন।