পরিবার পরিজনসহ একটু ভালো থাকার স্বপ্ন নিয়ে প্রবাসে যেতে চেয়েছিলেন লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের বাসিন্দা ৩০ বছর বয়সী যুবক মো. জুয়েল। দরিদ্র বাবার অর্থনৈতিক চাকা সচল করতে নিজ ফুফু ও ফুফাতো ভাইয়ের প্রতি আস্থা রেখেছে পরিবারটি। তাই ধার দেনা করে জুয়েলকে সিঙ্গাপুরে পাঠায় তারা। কিন্তু সিঙ্গাপুরে নয়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে বিমানে করে চট্টগ্রামে নামিয়ে দেয় নিকট আত্মীয়রা।
প্রতারণার শিকার হয়ে অবশেষে পরিবারটি দ্বারস্থ হয় লক্ষ্মীপুর আদালতে। মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারক। ঘটনার পর থেকে চক্রটি আত্মগোপনে থাকায় এখনো তারা অধরা রয়েছে বলে জানায় পুলিশ। এদিকে অন্য আরও মানুষের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই চক্রটির বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন ইউনিয়নের বটগাছতলা এলাকার বাসিন্দা শহীজল মাঝির ছেলে মো. জুয়েল। বাবার সঙ্গে মাছ ধরে কোনো মতে পরিবারের ৯ সদস্যে’র জীবিকানির্বাহ হতো। কিন্তু ভোলা জেলার বাসিন্দা ফুফু আলেয়া বেগম ও সিঙ্গাপুরে বসবাসের পরিচয় দেয়া ফুফাতো ভাই আওলাদ হোসেন তাদের টার্গেট করেন। এ লক্ষ্যে ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন তারা।
জুয়েলকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করেন। এসময় ১২ লাখ টাকার প্রস্তাবে ৫ লাখ টাকা দেয়ার সম্মতি দেন জুয়েলের পরিবার। পরে একটি এনজিও সংস্থা ও স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ ও ধার দেনা করে টাকা সংগ্রহ করে তাদের হাতে তুলে দেন। গত ২৮ এপ্রিল সিঙ্গাপুরের ফ্লাইটের কথা বলে জুয়েলকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। এরপর শাহজাহাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলে ফুফাতো ভাই তাকে নিয়ে বিমানে করে চট্টগ্রামে নামিয়ে দেয়। এসময় একটি হোটেলে নিয়ে তাকে আটকে রেখে পরিবারকে সিঙ্গাপুরে পৌঁছানোর কথা জানাতে চাপ (ভয়ভীতি) প্রয়োগ করে এবং বলতে বাধ্য করে। এক পর্যায়ে তাকে পুনরায় ঢাকায় নিয়ে এসে ৩টি মোটরসাইকেল যোগে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে নামিয়ে দেয়া হয় বলে জানান ভুক্তভোগী জুয়েল।
এদিকে প্রতারণার শিকার হয়ে দরিদ্র এ পরিবারটি এখন দিশেহারা। ঘটনার বিচার চেয়ে জুয়েলের বাবা শহীজল ৯ মে লক্ষ্মীপুর জজ আদালতে প্রতারণার মামলা করেন।
মামলায় আসামি শহীজল মাঝির বোন আলেয়া বেগম, ভাগনে আওলাদ হোসেন, আওলাদের শ্যালক সানী, ভাগনির স্বামী শামীম, ভাগনের স্ত্রী আয়েশাসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন বলে জানা যায়।
এ ব্যাপারে জুয়েলের বাবা শহীজল মাঝি ও তার মা গণমাধ্যমের কাছে জানান, ‘আমাদের সঙ্গে যে প্রতারণা করা হয়েছে সরকারের কাছে এর বিচার চাই। আর কেউ যেন এ ধরনের প্রতারণা ফাঁদে না পড়ে সে দাবি জানান তারা।
এদিকে স্থানীয় এলাকাবাসী বলছেন, ওই চক্রের প্রতারণা শিকার হয়েছেন পাশের গ্রামের মনু মাঝি নামের আরেকজন। এ চক্রের কাজই হচ্ছে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়া। তারা ঢাকায় থাকে ঘন ঘন ঠিকানা পাল্টায় বলে জানান তারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) পলাশ কান্তি নাথ জানান, জুয়েল নামের এক যুবককে সিঙ্গাপুর নেয়ার কথা বলে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে বলে শুনেছি। আদালতে একটি মামলা হয়েছে বিষয়টি পিবিআইকে তদন্ত দেয়া হয়েছে। পুলিশ এখনো (১৫ মে রাত ১১ টা ৫০ টা পর্যন্ত) কোনো অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।