বিশ্ব জুড়ে এখন সবচেয়ে বড়ো আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গত সাত দিনে ৪২ হাজার ২৩৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে সংক্রমিত হন ৫ হাজার ৭৩১ জন। এক সপ্তাহে আক্রান্তের হার ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।
তবে এই হার এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমই। কারণ এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ, চতুর্থ সপ্তাহে এই হার ছিল ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর এপ্রিলের শেষ সাত দিনে এই হার ছিল ১২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম ‘করোনা’ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মেলে। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। দেশে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৬৬০ জন।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ৩৮টি ল্যাবে ৬ হাজার ৭৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সংক্রমিত হয়েছেন ৯৬৯ জন। ১১ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩৭টি ল্যাবে ৭ হাজার ২০৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে রেকর্ড ১ হাজার ৩৪ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। গত ১০ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৭৩৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৮৭ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হন। গত ৯ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত পরীক্ষা করা হয় ৫ হাজার ৪৬৫টি নমুনা। এর মধ্যে ৬৩৬ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ে। ৮ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৯৪১টি নমুনা পরীক্ষা করা হলে ৭০৯ জনের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। ৭ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৮৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সংক্রমিত হন ৭০৬ জন। গত ৬ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৬ হাজার ২৪১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। আক্রান্ত শনাক্ত হন ৭৯০ জন। গত ৫ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত ৫ হাজার ৭১১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৭৮৬ জন সংক্রমিত শনাক্ত হন। দেশে প্রথম করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্ত হওয়ার দুই মাস চার দিন পূর্ণ হয়েছে গতকাল। বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা যেমন ছিল, বাংলাদেশেও একই রকম প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে, বাড়ছে সংক্রমণের পরিমাণ। শুধু তাই নয়, গত দুই সপ্তাহের কোনো দিনই নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ৫০০-এর নিচে ছিল না। গত ১১ মে রেকর্ড ১ হাজার ৩৪ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। দেশে প্রথম সংক্রমণের দুই মাস তিন দিনের মাথায় এক দিনে আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ২১ জানুয়ারি। দেশটিতে ৫৬ দিনের মাথায় প্রথম এক দিনে হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়। স্পেনে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ৩১ জানুয়ারি। দেশেটিতে ৪১ দিনের মাথায় প্রথম এক দিনে হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়।
আরো পড়ুন: সামাজিক দূরত্ব না মানতে পারলে যেভাবে নিরাপদে থাকা যায়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, চলতি মে মাসের আরো ১৮ দিন বাকি আছে। করোনার অবস্থা বুঝতে জুন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন বলেন, করোনা ভাইরাস এ পর্যন্ত নয়বার চরিত্র পরিবর্তন করেছে। এ কারণে বিশ্বের গবেষকেরা এর টিকা বের করতে পারেননি। টিকা বের হওয়া অনিশ্চিত। এর কোনো ওষুধ নেই। আগামী জুন মাস না গেলে দেশের অবস্থা বোঝা যাবে না। পরীক্ষা যত বাড়ছে, আক্রান্তের সংখ্যা তত বাড়ছে। মে মাস ক্রিটিক্যাল হবে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. খান মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগামী জুন মাস কীভাবে যাবে বলা মুশকিল। মানুষের আচরণ দেখে বোঝা যায় সংক্রমণের সংখ্যা আরো বাড়বে। দেশের মানুষের সবকিছুতেই এলোমেলো ভাব। মানুষ আড্ডা দিতে পছন্দ করে। নিয়ম মানতে চায় না। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছে না অনেকেই। তিনি বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের তুলনায় যেহেতু দেশে চিকিত্সার ব্যবস্থা নেই, তাই সবারই উচিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। নইলে সামনে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, নমুনা পরীক্ষার মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ ভাগ সংক্রমিত হন। করোনায় বেশি আক্রান্ত ঢাকা বিভাগে। মোট আক্রান্তের ৮৩ ভাগই ঢাকায়। এরপর পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগ রয়েছে।