May 18, 2024, 6:39 pm
সর্বশেষ:
রামপালে ৬৩০ জন রোগী পেল বিনামূল্যে ছানি অপারেশনের সুযোগ  চাল বিতরণে অনিয়মের দায়ে ইউপি সদস্য বরখাস্ত মোরেলগঞ্জের পোলেরহাট বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড, ১৩ দোকান পুড়ে ছাই মৌলভীবাজারে নদী রক্ষার বাঁধ নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতা ৬ তারিখে বাজেট দেবো, বাস্তবায়নও করবো: প্রধানমন্ত্রী বেনাপোলে দোয়াত কলম প্রতীকের নির্বাচনী গণসমাবেশ দেশজুড়ে আজ থেকে ‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ কার্যকর বিমানের সাবেক এমডিসহ ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট সরকারের জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপ দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি হ্রাস করেছে : প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আড়াই বছর পর বিজয়ী হলেন পরাজিত প্রার্থী

সাতক্ষীরা সিটি কলেজে জালিয়াতি ও তথ্য গোপনের মাধ্যমে শিক্ষকদের এমপিও ভুক্তকরণের অভিযোগ

  • Last update: Tuesday, October 31, 2023

আবদুল্লাহ আল মামুন, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি: জালিয়াতি ও তথ্য গোপনের মাধ্যমে কনিষ্ট শিক্ষকদের এমপিওভুক্তকরণের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়েরকৃত মামলায় সাতক্ষীরা সিটি কলেজের চার শিক্ষক আত্মসমর্পন করেছে। এদের মধ্যে অসুস্থ্যতাজনিত কারণে একজনের জামিন মঞ্জুর করে অপর তিনজনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

আজ সাতক্ষীরার বিশেষ আদালতে আসামীরা আত্মসমর্পন করেন। সাতক্ষীরা বিশেষ আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক, জেলা ও দায়রা জজ চাঁদ মো. আব্দুল আলীম আল রাজী শুনানী শেষে তিনজনের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন।

জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হওয়া আসামীরা হলেন, আশাশুনির নাকতাড়া গ্রামের আব্দুল হামিদ সরদারের ছেলে ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক এসএম আবু রায়হান, সদর উপজেলার নেবাখালি গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে দর্শণ বিভাগের প্রভাষক নাসির আহম্মেদ এবং সদর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের ধীরেন্দ্র্র নাথ সরকারের ছেলে হিসাব বিজ্ঞানের প্রভাষক অরুন কুমার সরকার। তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

অসুস্থ্যতার মেডিকেল সার্টিফিকেট বিবেচনা করে আদালত জামিন দিয়েছে একই মামলার অপর আসামী দেবহাটার উত্তর পারুলিয়া গ্রামের দেলবার মৃধার ছেলে সিটি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. মনিরুল ইসলামকে।

মামলার প্রধান আসামী সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু সাঈদ পলাতক রয়েছেন।
সাতক্ষীরা আদালত সূত্রে জানা গেছে, প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে চার প্রভাষককে এমপিওভুক্ত করার মাধ্যমে ২০ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে উপরোক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক প্রবীর কুমার দাস ২০২২ সালের ৯ মার্চ খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয় মামলা (৩/২০২২) দায়ের করেন। যা পরবর্তীতে সাতক্ষীরা বিশেষ আদালতে ২/২০২২ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা দুদকের খুলনা অফিসের সহকারি পরিচালক বিজন কুমার রায় চলতি বছরের ৫ মে আদালতে ওই পাঁচ আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত ২৬ অক্টোবর দুদকের দাখিলকৃত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আদালত আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়ে রেজুলেশন জালিয়াতি করে সাতক্ষীরা সিটি কলেজে ২৪ জন শিক্ষক নিয়োগ ও ২১জন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করার অভিযোগে ২০১৫ সালের ১৫আগস্ট সাতক্ষীরায় এসে তদন্ত শুরু করেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক প্রবীর কুমার দাস। ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর সাবেক অধ্যক্ষ ইমদাদুল হক ও সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সুকুমার দাসের নিকট থেকে দুদক সাতক্ষীরা সিটি কলেজের দুর্নীতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য অবগত হন। অভিযুক্ত ২১জন প্রভাষক ও অধ্যক্ষ আবু সাঈদকে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কয়েক দফায় দুদক কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নেওয়া হয় তাদের লিখিত জবানবন্দি। পরবর্তীতে বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. মনিরুল ইসলাম, দর্শণ বিভাগের প্রভাষক নাসির আহম্মেদ, ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক এস্এম আবু রায়হান এবং হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক অরুন কুমার সরকারের কাগজপত্র জাল বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়।

মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়, ব্যান বেইস এর তথ্য অনুসারে মো. মনিরুল ইসলামের প্রকৃত যোগদানের তারিখ ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর। এসএম আবু রায়হানের যোগদানের তারিখ ২০০৫ সালের ১৭ মার্চ। মো. নাসির আহম্মেদ এর প্রকৃত যোগদানের তারিখ ২০১৬ সালের পহেলা ডিসেম্বর ও অরুন কুমার সরকারের যোগদানের তারিখ ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর। এইসব শিক্ষকদের যোগাদানের তারিখ জালিয়াতি করে মনিরুল ইসলাম ও অরুন কুমার সরকারের যোগদান ২০০৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর, এসমএম আবু রায়হান ও নাসির আহম্মেদ এর যোগদান দেখানো হয়েছে ২০০৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর। মাউশি’র ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের পরিপত্রে উল্লেখ করা হয় যে, ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির পূর্বে ডিগ্রী স্তরে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হতে পারবেন। এই পরিপত্র জারির পরপরই অধ্যক্ষ আবু সাঈদ ওই চার শিক্ষকের তথ্য জালিয়াতি করে এমপিওভুক্তির জন্য অফ লাইনে মাউশি বরাবর আবেদন করেন। এরই আলোকে তারা ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে এমপিওভুক্ত হন। অধ্যক্ষ আবু সাঈদের যোগসাজসে ওই চারজন শিক্ষক ২০১৯ সালের পহেলা ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট পর্যন্ত বেতন ভাতা বাবদ ২০ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৬ টাকা রুপালী ব্যাংক সাতক্ষীরা কর্পোরেট শাখা থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।

সূত্রটি আরও জানায়, বর্তমানে আরও ১২জন শিক্ষকের তথ্য জালিয়াতি করে এমপিওযোগ্য নামের তালিকাভুক্ত করার অভিযোগে ২০২৩ সালের ১০ জুলাই থেকে ১২ জুলাই দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক ও অনুসন্ধানী কর্মকর্তা তাদেরকে ডেকে নিয়োগ সংক্রান্ত সকল তথ্য উপাত্ত রেকর্ড করেন। এছাড়া চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আজিম খান শুভসহ চারজনের নামে দুদক থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে তাদের নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা ও বেতন ভাতা গ্রহণের পরিমান জানতে চাওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে সাতক্ষীরার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পিয়ন, নাইট গার্ড থেকে শুরু করে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ১০ লাখ টাকা থেকে ৩৫ লাখ টাকা ভাগবাটোয়ারার এক অলিখিত সিস্টেম গড়ে উঠেছে। আর এই সিস্টেমের বলি হয়ে বছরের পর বছর বিনা বেতনে চাকুরি করে বহু ননএমপিওভুক্ত শিক্ষক এমপিওভুক্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে পথে বসেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরি ব্যবসার এই টাকার বড় অংশ চলে গেছে জনপ্রতিনিধি নামক রাজনৈতিক নেতার পকেটে। কথিত আছে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তারী পরোয়ানা পেয়ে পলাতক হওয়া অধ্যক্ষ আবু সাইদ সাতক্ষীরার দিবা নৈশ্য কলেজের উপাধ্যক্ষ পদ ছেড়ে ঐ নেতার পকেটে ৩৫ লাখ টাকার দিয়ে সিটি কলেজে যোগ দেন। সেই টাকা উসুল করতে তিনি রাতকে দিন বানিয়ে অসংখ্য অবৈধ নিয়োগ সম্পন্ন করেন। সাতক্ষীরার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই একই ধারা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।

Drop your comments:

Please Share This Post in Your Social Media

আরও বাংলা এক্সপ্রেস সংবাদঃ
© 2023 | Bangla Express Media | All Rights Reserved
With ❤ by Tech Baksho LLC