আবদুল্লাহ আল মামুন, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা জেলায় সিএস ও এসএ রেকর্ডের প্রায় ৬০ হাজারের অধিক খতিয়ান জরাজীর্ণ। ফলে হাজার হাজার বিঘা জমি অবৈধভাবে দখলে রেখেছে প্রতিপক্ষের ছত্রছায়ায় প্রভাবশালীরা। এদিকে প্রকৃত স্বত্বের দাবিদাররা বিপাকে পড়ে জমি উদ্ধারপূর্বক মালিকানা স্বত্ব ফিরে পেতে কেউ কেউ আদালতের দারস্থ হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ঘটাচ্ছেন বিরোধমূলক নানান অপরাধ কর্মকান্ড।
জানা গেছে, সাতক্ষীরার ১৭১০টি গ্রামের ১১০৩টি মৌজায় ভূমি সংক্রান্ত ডকুমেন্ট সংরক্ষণাগার জেলা রেকর্ডরুম। এই রুমে লাখো লাখো খতিয়ান রয়েছে। সেপ্রেক্ষিতে সিএস খতিয়ান অন্যতম। যেটি বাংলাদেশের প্রথম খতিয়ান নামে সমধিক পরিচিত। বাইরে নহে এসএ খতিয়ানও। এই দপ্তরে রেকর্ডের রেজিষ্ট্রাররে অন্তর্ভুক্ত খতিয়ানকে ROR বলা হয়। এর একটি কপি ইউনিয়ন ভূমি অফিসেও থাকে। যাকে ১ম ও ২য় রেজিষ্ট্রার বলা হয়ে থাকে। সম্প্রতি পূর্বের সিএস ও এসএ খতিয়ানের জমি উদ্ধারে বেড়েছে আদালতে মামলা-মোকদ্দমা। বেড়েছে রেকর্ডরুমের কর্মকর্তার কাছে ভুক্তভোগীদের সার্টিফাইড খতিয়ান পাওয়ার আবেদনপত্রের সংখ্যাও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, এসএ রেকর্ড অনুযায়ী জেলায় ৯৬০ টি মৌজা রয়েছে। এরমধ্যে আনুমানিক শ্যামনগরের ১২০ টি মৌজায় ১ লক্ষাধিক, কালিগঞ্জের ২৩০টি মৌজায় ১লক্ষ ২২ হাজারের অধিক, আশাশুনিতে ৭২ টি মৌজায় ৮৫ হাজার, দেবহাটায় ২৬ টি মৌজায় ৫২ হাজার, সাতক্ষীরা সদরের ১২৪ টি মৌজায় ১ লক্ষাধিক, কলারোয়ায় ১০০ টি মৌজায় ৬৫ হাজার ও তালায় ১৬০টি মৌজায় ১ লক্ষ ২৫ হাজারের অধিকসহ মোট ৬ লক্ষ ৪৯ হাজার খতিয়ান রয়েছে। এছাড়াও সিএস খতিয়ান রয়েছে প্রায় ২ লক্ষাধিক।
এ ব্যাপারে জেলা রেকর্ডরুমের কিপার এম গোলাম মোস্তাফা জানান, আমাদের দপ্তরে সিএস ও এসএ খতিয়ান প্রায় ৬০ হাজারের অধিক জরাজীর্ণ বা নষ্ট। উক্ত খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি তুলতে আমাদের স্যারের কাছে প্রতিনিয়ত অনলাইন ও ম্যানুয়ালি আবেদন করছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। সেপ্রেক্ষিতে ROR যাচাইপূর্বক সার্টিফাইড খতিয়ান কপি প্রস্তুত করতে কাজ করি আমরা। কারো কারো কপি প্রস্তুত করতে পারি। আবার পুরোনা রেকর্ডের ROR জরাজীর্ণ থাকায় কারো কারো সার্টিফাইড কপি প্রস্তুত করতে পানিনা আমরা। তবে আমাদের স্যারের স্বাক্ষরিত ঐ খতিয়ানে একটি কপি তাদের হাতে তুলে দেই। সেই কপিতে লেখা থাকে-‘এই অফিসের ROR জরাজীর্ণ থাকায় কপি সরবরাহ করা গেলো না।’ অথচ ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনেকে আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে।
নিজেদের নামে নালিশী জমি সহ অন্যান্য জমি রেকর্ড করিয়াছে। যাহা সম্পূর্ণ বেআইনী। উপরিউক্ত বিষয়াদি নিরসনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পৌর ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) মোস্তফা মনিরুজ্জামান জানান, জেলা রেকর্ডরুমে একটি ROR থাকে। আমাদের এখানেও একটি ROR থাকে। তবে সেই জঙজ তে কোনো কর্মকর্তার স্বাক্ষর থাকে না। ইতিপূর্বে আমাদের ROR দেখে খতিয়ানের প্রস্তুতের ক্ষমতা দিয়েছিল। সেই ক্ষমতা এখন আর নেই। তবে ভুক্তভোগীদের মামলার প্রেক্ষিতে আমাদের কাছে জবাব চাই। তখন আমাদের ROR তে খতিয়ানের অংশ ভালো থাকলে আমরা জবাবে লিখে দেই সই বিহীন ROR অংশে ভালো রয়েছে এবং জমির মালিকানা স্বত্বের বিবরণ লিখে দেই। আর ছেঁড়া থাকলে লিখে দেই জরাজীর্ণ। আমাদের রেফারেন্স ব্যবহার না করলে ভালো হয়। আমাদের এসিল্যান্ড স্যারের সাথে যোগাযোগ করেন।
সাতক্ষীরা সদর এসিল্যান্ড কর্মকর্তা সুমনা আইরিন এঁর সাথে যোগাযোগ করার জন্য তার অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি এবং সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজী আরিফুর রহমানকে তার ব্যবহৃত সেল নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তা রিসিভ করেনি।