
আবদুল্লাহ আল মামুন,সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি: তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পরিত্যক্ত ভবনের মধ্য স্যাতস্যাতে পরিবেশে বিপুল সংখ্যক বই অযত্নে আর অবহেলায় পঁচে নষ্ট হলেও এসবের তোয়াক্কা না করে বই সংরক্ষণ করার কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।
বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক,শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বইপ্রেমীরা বিরূপ মন্তব্য করলেও দায়সাড়া বক্তব্য দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাইছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর ফলে প্রতি বছর অতিরিক্ত নতুন বই ছাপাতে হচ্ছে শিক্ষা বিভাগকে আর কাড়িকাড়ি টাকা খরচ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার।
তথ্য মতে জানা যায়,দুটি থানা নিয়ে গঠিত তালা উপজেলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,মাদ্রাসা,বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কিন্ডাগার্ডেন মিলিয়ে মোট ২১১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতি বছর ৩৯ হাজার ৯ শত ৩২ সেট বই বিতরণ করা হয়।
তথ্যমতে আরও জানা যায়,২১১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অতিরিক্ত বই আনায়ন করে তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পরিত্যাক্ত ভবনে ফেলে রাখা হয়। এখান থেকেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয় নতুন বই। কিন্তু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ভবন দীর্ঘ সময় সংস্কার না করায় এর ভিতরের পরিবেশ খুবি নোংরা ও স্যাতস্যাতে। নোংরা ও স্যাতস্যাতে পরিবেশে দীর্ঘ দিন অযতেœ ফেলা রাখার কারণে প্রায় কয়েক লক্ষাধিক টাকার বই পচে গেছে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী তালিকা তৈরি করে অনলাইনের মাধ্যমে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জমা দেন। শিক্ষা কর্মকর্তা ওই তালিকা যাচাই-বাছাই করে জেলায় পাঠিয়ে থাকেন অথবা তালিকা অনুযায়ী শিক্ষা অধিদফতর প্রাথমিক সকল শ্রেণির বই উপজেলায় পাঠিয়ে থাকে। খাতাকলমে বইগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রয়েছে ৫ সদস্য কমিটি ও নিয়োগ দেওয়া হয় একজন প্রহরীকে; কিন্তু বাস্তবে এসব কিছুই নেই।
সরেজমিন দেখা গেছে,গত কয়েক বছর যাবত শিক্ষার্থীদের চাহিদা মেটানোর পর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ভবনে অযতœ-অবহেলায় পড়ে রয়েছে কয়েক হাজার বই। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বৃষ্টির পানি ও বাথরুমের ময়লা পানিতে একাকার হয়ে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বইয়ের স্তুপগুলো। পরিত্যক্ত অবস্থায় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে বইগুলো। এমনকি সুযোগ বুঝে স্থানীয় অসাধু লোকজন বইগুলো সঙ্গোপনে ফেরিওয়ালা ও দোকানিদের কাছে বিক্রি করে চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, নৈশপ্রহরী ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যেসব অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় তা কাজে না খাটিয়ে আত্মসাৎ করছেন দায়িত্বে থাকা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।এছাড়াও এই শিক্ষা কর্মকর্তার কে শিক্ষক বদলী সহ সরকারী ভাবে বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করতে হলে ঘুষ প্রদান করতে হয়।
অভিভাবক ও বইপ্রেমীরা এমন বই নষ্ট হওয়ার বিষয়ে আক্ষেপ করে বলেন, এটা হলো উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের উদাসীনতা। তারা সরকারী কর্মচারী হয়ে সরকারের কাড়ি কাড়ি টাকা নষ্ট বা আ্ত্তসাৎ করার নেশায় মগ্ন আছেন। তাই বই গুলো সংরক্ষণ করার সুযোগ পাচ্ছেন না।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার প্রদত্ত উপজেলা সকল শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে দেওয়া পাঠ্যবই বিতরণের পরে কিছু বই থেকে যায়। পরে সেই বই গুলো অন্য উপজেলারয় চাহিদা অনুযায়ী পাঠানো বা কর্ণফুলী পেপার মিলস্ এর মাধ্যমে বিক্রয় করে দেওয়া হয়। উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ভবনে মধ্য বই গুলো কর্ণফুলী পেপার মিলস নিতে অনিচ্ছা পোষন করায় রেখে দেওয়া হয়েছে। তবে লক্ষাধিক টাকার বই গুলো কেন নষ্ট করা হচ্ছে জানতে চাইলে শিক্ষা কর্মকর্তা বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।