বর্তমান সরকার পতনে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে সম্মিলিতভাবে আন্দোলনে নামতে ঐকমত্য হয়েছে জেএসডি-বিএনপি। গতকাল রোববার বিকেলে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সঙ্গে দেড় ঘণ্টার সংলাপ শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা জানান।
উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরে আ স ম আবদুর বরের বাসায় বিএনপি ও জেএসডির মধ্যে এ সংলাপ হয়। সংলাপে জেএসডির চার সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সভাপতি আ স ম আবদুর রব। অন্যরা হলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন তালুকদার, কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও সহ-সভাপতি তানিয়া রব।
বিএনপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমদু টুকু ও মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দিন স্বপন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা একমত হয়েছি। জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করেই সম্মিলিতভাবে এ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তাদের পতন ঘটাব।’
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার থাকলে আমরা কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না। শুধু তাই নয়, আমরা এক সঙ্গে এক জোটেই কাজ করব, যেন আমরা এ সরকারকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই জনগণের কাছে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারি। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করতে একমত হয়েছি।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের এ ঐকমত্য শুধু নির্বাচন নয়, যেন রাষ্ট্রের একটা আমূল পরিবর্তন করতে পারি, তা নিয়ে। মানুষের সামনে একাত্তর সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, সে স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা যৌথভাবে যে কাজ করার চিন্তা করেছি, সেভাবে কাজ করব। আমরা মনে করি, আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ঐক্য গড়ে উঠবে এবং আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতই বলে দেবে, আমাদের জনগণ বলে দেবে যে আমরা কোন পথে যাব, আন্দোলনের ধারা কী হবে, আন্দোলনের গতি কী হবে।’
এ সময় আ স ম আবদুর বর বলেন, ‘এবারের আন্দোলনের লক্ষ্য হবে একই সঙ্গে স্বৈরাচারী সরকারের পতন, নিপীড়নমূলক অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার উচ্ছেদ, শাসনতন্ত্র পরিবর্তন। দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়, এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। আমরা মাঠে নামব। মাঠে জনগণ আমাদের থাকবে, তারাই নির্ধারণ করবে আমরা কোথায় যাব?’
আন্দোলনের কৌশল মাঠে ঠিক হবে উল্লেখ করে আব্দুর রব বলেন, ‘আজকের এ আলোচনায় আমরা ২১ দফা দাবিনামা নিয়ে কথা বলেছি। জাতীয় রাজনীতির প্রয়োজনে আন্দোলনের স্বার্থে আমাদের এ আলোচনা অব্যাহত থাকবে।’
আব্দুর রব আরও বলেন, ‘আমরা ২০১৮ সালে একসঙ্গে আন্দোলন করেছি। এবার পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে জাতীয় সরকারের একটা কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আজ দেশে জনগণের মালিকানা নেই। এবার আমরা স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র বিনির্মাণ শুরু করব। এ আন্দোলনই হবে আমাদের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ।’
সরকারবিরোধী আন্দোলনে বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে বিএনপির মহাসচিব গত ২৪ মে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে। প্রথম দফায় মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, জোনায়েদ সাকির গনসংহতি আন্দোলন, সাইফুল হকের বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে সংলাপ করেন তিনি।
এ ছাড়া এখন পর্যন্ত ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ন্যাপ-ভাসানী, মুসলিম লীগ, ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, সাম্যবাদী দল, ডেমোক্রেটিক দলের সঙ্গেও সংলাপ শেষ করেছেন মির্জা ফখরুল।