মেগা প্রকল্পে অর্থ খরচে সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-কে রিজার্ভের প্রকৃত হিসাব দিতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের উদ্যোগে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকের পত্রিকায় আছে, আইএমএফ জিজ্ঞাসা করেছে কেনো জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, কেনো অর্থ পাচার হচ্ছে, কেনো মূল্যস্ফীতি বাড়ছে? উত্তর দিতে পারছে না। কেনো আমাদের আজকে রিজার্ভ নেই। কেনো রিজার্ভের হিসাব এই সরকার আইএমএফকে দিতে পারছে না। কেননা- সারা পৃথিবীতে নিয়ম নেই যে, রিজার্ভ থেকে নিজের দেশের অভ্যন্তরে মেগা প্রজেক্টে ঋণ দেয়া। তারা (সরকার) ঋণ দিয়েছে। কিন্তু এটাতে আন্তর্জাতিক যে নিয়ম সেই নিয়মে সেটা তারা হিসাবে আনতে পারছে না। তার জন্য দেখাচ্ছে রিজার্ভ বেশি, আইএমএফ দেখছে কম। এটা আজকে জনগণের কাছে প্রকাশিত হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ কিন্তু সেই ৭২-৭৫ এ যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করে বাংলাদেশকে একটি ধ্বংসের পথে নিয়ে গিয়েছিলো তারাই কিন্তু ১৪ বছর যাবত গায়ের জোরে ভোট ছাড়া ক্ষমতায় বসে আছে। অর্থনীতিকে তারা ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গেছে। আপনারা দেখেন যে, ৭৫ সালে যে ঘটনা ঘটেছিলো গণতন্ত্র হত্যা, অর্থনীতি ধ্বংস, দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি। আর আজকে গায়ের জোরে প্রধানমন্ত্রী বলছেন দুর্ভিক্ষ হবে। তাহলে আমরা যদি বলি, আজকের বাংলাদেশ সেই ৭৫-এর ৭ নভেম্বরের পূর্বের যে দেশের পরিস্থিতি, যে পরিবর্তনের জন্য ৭ নভেম্বর এসেছিল, আজকের বাংলাদেশকে সেই একই আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে সেই অবস্থায় রেখে গেছে। সেজন্য আমরা ৭ নভেম্বরের গুরুত্বকে সকলে উপলব্ধি করে আগামী দিনের পথকে আমরা রচনা করতে চাই। ৭ নভেম্বর কি ছিলো? পরিবর্তনের জন্য। আর আজকে সারাদেশের জনগণের মুখে মুখে এক কথা তারা পরিবর্তন চায়। কেনো চায়? এই সরকার সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে, লুটপাট করেছে, টাকা পাচার করে বাংলাদেশকে দেউলিয়া করে ফেলেছে, ব্যাংক লুট করে ব্যাংককে দেউলিয়া করে ফেলেছে। দেশকে তারা এই অবস্থায় নিয়ে গেছে। আজকে দেশের মানুষ এই অবস্থা থেকে মুক্তি চায়, এই সরকার থেকে দেশের মানুষ মুক্তি চায়। আমরা জানি, কোনো স্বৈরাচারী সরকার স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছাড়ে না। সেখানে প্রয়োজন হয় আন্দোলন-সংগ্রামের। অতীতে আমাদের দেশেও প্রমাণ আছে পাকিস্তানের সময়ে আইয়ুব খানের আমলে ঠিক একই রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিলো। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সামনে কিন্তু তাকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল। এই বাংলাদেশে হোসেইন মুহম্মদ এরশাদ স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করে এই অবস্থা সৃষ্টি করেছিলো সেখানে কিন্তু দেশে গণঅভ্যুত্থানের সামনে এরশাদকে মাথা নত করতে হয়েছিলো। আজকে জনগণের মধ্যে বিক্ষোভ দানা বেঁধেছে। বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোই তার প্রমাণ।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতাদের ব্যর্থতার কারণে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উত্থান। দেশের টার্নিং পয়েন্ট ছিলো ৭ নভেম্বর। যা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ৭২-৭৫ পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা দেশের গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছিল। এরপর দেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিলো। তাদের নেতা আক্ষেপ করে বলেছিলেন সবাই পায় সোনার খনি আর আমি পেলাম চোরের খনি। সে সময় দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছিলো। রক্ষী বাহিনীর দ্বারা ৩০ হাজার লোককে হত্যা করেছিলো। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছিলো। ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা কারা ঘটিয়েছে এটা পরবর্তী সরকার যারা প্রতিষ্ঠা করেছে সেখানে পরিষ্কার হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে আরেকটি আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে। এরপর ২ নভেম্বর রাত থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোন্দলের কারণে আরেকটি সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান ঘটে। এ সময় জিয়াউর রহমানকে পদত্যাগে বাধ্য করে ও তাকে বন্দি করে। অনেক ঘটনা পাল্টা ঘটনা ঘটে। সে সময় ৩-৬ নভেম্বর পর্যন্ত সরকার ছিলো না। রেডিও, টিভি বন্ধ ছিলো। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হারিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন শুরু হয়েছিলো। খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ঠিক সে সময় ৭ নভেম্বর দেশের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করা হয়েছিলো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এজন্য ৭ নভেম্বর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দুটি বিষয় দেশের মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত একটি- জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা ও ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লব। অর্থাৎ দুইটি বিশেষ দিনে জিয়াউর রহমান জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতার কারণে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তেমনি ৩-৬ নভেম্বর যখন রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতা তখনো জিয়াউর রহমান জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সিপাহী-জনতা জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন। যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু আওয়ামী লীগ এই দিনকে গুরুত্ব না দিয়ে ‘মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস’ পালন করছে। আসলে তারা পরিবর্তন সহ্য করতে পারে না। আমাদের নেতা জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সহ্য করতে পারে না।
তিনি বলেন, একটি আধুনিক উন্নত ও স্বনির্ভর দেশ গড়তে মনোনিবেশ করেন জিয়াউর রহমান। তিনি দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলেন। অর্থনীতি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে শিল্প খাতে বিনিয়োগ করেন। মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করেন। রাস্তায় হেঁটে হেঁটে মানুষকে সংগঠিত ও উজ্জীবিত করেছিলেন। গ্রাম সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।সেনাবাহিনীতে আধুনিকায়ন করেন। আজকে আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানকে সহ্য করতে পারে না। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করছেন। অর্থাৎ যেখানে আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতারা ব্যর্থ। সেখান জিয়াউর রহমান সফল। যার প্রমাণ ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লব।
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে এবং ডা. মেহেদী হাসান ও সায়ীদ মেহবুব উল কাদিরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, ড্যাবের মহাসচিব ডা. আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাক রহিম স্বপন, মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, জহিরুল ইসলাম শাকিল, শহিদুল আলম, সিরাজুল ইসলাম, আদনান হাসান মাসুদ, পারভেজ রেজা কানন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ডা. বজলুল গনি ভুঁইয়া, নিলোফা ইয়াসমীন, শহিদুর রহমান, শামীম সরকারসহ ড্যাবের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।