রাশিয়ার বিচার মন্ত্রণালয় ‘আন্তর্জাতিক এলজিবিটি পাবলিক মুভমেন্টকে’ নিষিদ্ধ ও চরমপন্থী বলে অভিহিত করার জন্য দেশটির সুপ্রিম কোর্টে একটি প্রস্তাব দাখিল করেছে। সমগ্র এলজিবিটি সম্প্রদায়কে নাকি নির্দিষ্ট কোনো সংস্থার বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে তা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিটিতে স্পষ্ট নয়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
বিচার মন্ত্রণালয় বলেছে, এই আন্দোলন ‘সামাজিক ও ধর্মীয় বিবাদ’ উসকে দেওয়াসহ ‘চরমপন্থী কার্যকলাপের’ লক্ষণ দেখিয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে যেকোনো এলজিবিটি কর্মীকে ফৌজদারি মামলার শিকার হতে পারে। আগামী ৩০ নভেম্বর শীর্ষ আদালত এই প্রস্তাবটির শুনানি হবে।
চরমপন্থী লেবেলটি অতীতে রাশিয়া কর্তৃপক্ষ অধিকার সংস্থা এবং বিরোধী দল যেমন আলেক্সি নাভালনির দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে।
মস্কো টাইমস রাশিয়ার অভ্যন্তরের একজনকে উদ্ধৃত করে বলেছে, এই নিষেধাজ্ঞা এলজিবিটি সংস্থাগুলোর পক্ষে কাজ করা অসম্ভব করে তুলবে এবং কর্মী ও কর্মচারীদেরকে ফৌজদারি মামলার ঝুঁকিতে ফেলবে। মূলত, এটি শুধুমাত্র অভিযোজন বা পরিচয়ের ওপর ভিত্তি করে যে কাউকে ফৌজদারি বিচারের মুখোমুখি করবে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপটি জনসমর্থন পাওয়ার কৌশল, যা আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ভোটে জেতার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
ভ্লাদিমির পুতিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে পঞ্চম মেয়াদে দাঁড়াবেন বলে ব্যাপকভাবে আশা করা হচ্ছে, যদিও তিনি এখনো প্রকাশ্যে তাঁর প্রার্থীতা ঘোষণা করেননি।
পুতিন রাশিয়ায় এলজিবিটি কমিউনিটির ওপর ব্যাপক নিপীড়ন চালিয়েছেন। এলজিবিটিদের তিনি ‘প্রথাগত রাশিয়ান মূল্যবোধের’ ওপর পশ্চিমা আক্রমণের অংশ হিসাবে দেখেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণের পর এই প্রচারণা ত্বরান্বিত হয়েছিল।
গত বছরের ডিসেম্বরে পাস করা আইনে সব বয়সের মধ্যে ‘অপ্রথাগত যৌন সম্পর্কের প্রচার’ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটি মূলত অপ্রাপ্তবয়স্কদের লক্ষ্য করে ২০১৩ সালের একটি আইনের একটি সম্প্রসারণ ছিল।
আইনটি গণমাধ্যমে সমকামী সম্পর্কের যেকোনো ইতিবাচক চিত্রায়নকে পর্নোগ্রাফি বিতরণ, সহিংসতার প্রচার, জাতিগত এবং ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়ানোর মতো অপরাধের সঙ্গে শ্রেণীবদ্ধ করে।
এই বছর ট্রান্সজেন্ডার অধিকারের বিরুদ্ধে একটি অভিযান দেখা গেছে, জুলাই মাসে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে লিঙ্গ পুনর্নির্ধারণ অস্ত্রোপচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে দেশটির কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, রাশিয়ায় ‘অপ্রথাগত যৌন সম্পর্ক’ নিষিদ্ধ নয়।
ডেপুটি জাস্টিস মিনিস্টার আন্দ্রে লগিনভ গত সোমবার রাশিয়ার মানবাধিকার রেকর্ডের জাতিসংঘের একটি পর্যালোচনায় বলেছেন, এলজিবিটি অধিকারগুলো আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং যৌন অভিমুখীতা বা লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
তবে সর্বশেষ পদক্ষেপটি ইতিমধ্যে হুমকির মুখে থাকা এলজিবিটি সম্প্রদায়ের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এলজিবিটি প্রচারক বিবিসিকে বলেছেন, ‘অধুকার কর্মীরা রাষ্ট্রের পাশাপাশি হোমোফোবিক এবং ট্রান্সফোবিক গোষ্ঠীর চাপের মুখে পড়ে, প্রায়ই শারীরিক আক্রমণের শিকার হয়।
রাশিয়া ছেড়ে পালিনো এলজিবিটি দাতব্য সংস্থার বস দিলিয়া গফুরোভা ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, কর্তৃপক্ষ কেবল আমাদের সমাজ থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে না, তাঁরা আমাদের একটি সামাজিক গোষ্ঠী হিসাবে নিষিদ্ধ করতে চায়। তবে যত বাধাই আসুক, আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব।