কাজের সন্ধানে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজবাড়ী থেকে মানিকগঞ্জ আসেন দিনমজুর খালেক প্রামানিক (৫৫)। কাজও জোটান। মানিকগঞ্জের আব্দুল লতিফ নামের একজনের বাসায় থাকতে শুরু করেন নাটোর থেকে আসা আব্দুল হালিমের (২২) সঙ্গে। হালিমকে শারীরিক সম্পর্কের আহ্বান জানান প্রামানিক। শুরুর দিকে সাড়াও দেয় হালিম। কিন্তু গত ৮ মার্চ হালিম বেঁকে বসলে খেপে যান প্রামানিক। শুরু হয় ধস্তধস্তি। একপর্যায়ে গামছা পেঁচিয়ে প্রামানিককে শ্বাসরোধে হত্যা করে হালিম। ৬ এপ্রিল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর হাতে গ্রেফতার হয় হালিম।
পিবিআই বলছে, রাজবাড়ীর খালেক প্রামানিক ও নাটোরের আব্দুল হালিম একে অন্যের অপরিচিত ছিলেন। ৫ মার্চ আব্দুল লতিয়ের বাসায় আসেন খালেক। ৫-৭ মার্চ তিন রাত তারা দুজন এক বিছানাতেই রাত কাটান। ৮ মার্চ দিনমজুর খালেকের মরদেহ গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকে পলাতক ছিল আব্দুল হালিম।
এ ঘটনায় মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। খালেক প্রামাণিকের ছেলে সিরাজুল ইসলাম মিরাজ মামলাটি করেন। থানা-পুলিশের পাশাপাশি মামলার তদন্ত করে পিবিআই মানিকগঞ্জ জেলা। ছায়া তদন্তের অংশ হিসেবে পিবিআই মানিকগঞ্জ টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ও তথ্য সংগ্রহ করেন।
গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে হালিমকে শনাক্ত করে পিবিআই মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ। ৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় নাটোরের সিংড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে হালিম পিবিআইকে জানায়, ৪ মার্চ মানিকগঞ্জের বাস স্ট্যান্ডে দিনমজুর খালেক প্রামাণিকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই দিন সন্ধার পর থেকে দুজনেই শ্রমিক হিসেবে আব্দুল লতিফের বাড়িতে অবস্থান করে। গভীর রাতে খালেক প্রামাণিকের ইঙ্গিতে হালিমের সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্ক হয়। এভাবে চলে তিন রাত। ৭ মার্চ রাতে হালিম প্রকৃতির ডাকে বাইরে বের হলে খালেক তাকে আহ্বান জানান। কিন্তু এবার আর সায় দেয় না হালিম। একপর্যায়ে ঘরের বাইরেই খালেকের সঙ্গে তার ধস্তধস্তি শুরু হয়। খালেকের গলায় দড়ি পেঁচিয়ে তাকে ফেলে দেয় হালিম। পরে টেনেহিঁচড়ে শোবার ঘরে নিয়ে আসে। এরপর খালেকের পরনের গামছা তার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে হালিম। নগ্ন অবস্থাতেই খালেক প্রামানিককে বাথরুমের খাটে বেঁধে রাখে সে। এরপর নিজের কাপড় ও প্রামাণিকের মোবাইলসহ পালিয়ে যায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই মানিকগঞ্জ জেলার এস আই সামরুল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আসামি হালিমের কাছে থেকে নিহত খালেক প্রামাণিকের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
পিবিআই মানিকগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমকে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের কোনও ক্লু ছিল না। গ্রেফতারের পর আসামি হালিমের বরাত দিয়ে পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যানুযায়ী সমকামী সম্পর্কের দ্বন্দ্ব ও ক্ষোভ থেকেই দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়। পরে খালেককে হত্যা করে হালিম।