প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সব দুর্যোগ মোকাবিলায় সফল বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
করোনা মোকাবিলায় সরকারের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরূপ মন্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব ও বিএনপি নেতারা একই সমালোচনার বাঁশি বহুদিন ধরেই বাজাচ্ছেন, তাদের কাছে একই ঢোলের আওয়াজ আমরা দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পৃথিবীতে যে কটি দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুহার খুব কম, তার মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। এমনকি ভারত, পাকিস্তানের চেয়েও বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার অনেক কম। প্রধানমন্ত্রীর সঠিক নেতৃত্বের কারণেই এটি সম্ভবপর হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯৮ সালে দেশের ৭৫ ভাগ এলাকা পানির নিচে চলে গিয়েছিল, তিনমাস বন্যার পানি ছিল, বাংলাদেশে মানুষ অনাহারে মৃত্যুবরণ করেনি। ২০০৭ সালের সিডর, ২০০৯ সালের আইলাসহ অনেক দুর্যোগের সফল মোকাবিলার কথা আপনারা জানেন। আমরা ক্ষমতা আসার পর গত সাড়ে ১১ বছরে বহুবার বন্যা হয়েছে, এবছরও ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, তখন কীভাবে প্রধানমন্ত্রী নির্ঘুম রাত কাটিয়ে সেই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করেছেন, মানুষকে ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে রক্ষা করা, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে তাদেরকে রক্ষা করার দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন।’
বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে এবার বন্যায় অনেক প্রাণহানি হতে পারে -জাতিসংঘের এমন আশঙ্কার কথা তুলে ধরলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বন্যা নিয়ে বসবাস করি, বন্যাকে কিভাবে মোকাবিলা করতে হয় বাংলাদেশের মানুষ সেটি জানে। বন্যা আমাদের নিত্যসঙ্গী। যেসকল দেশ বন্যার সাথে পরিচিত নয়, জাতিসংঘের পূর্বাভাস তাদের জন্য অবশ্যই সহায়ক। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ বন্যা নিয়ে বসবাস করে, বন্যা কিভাবে মোকাবিলা করতে হয় সেটি আমাদের জানা এবং আমাদের কাছ থেকে অনেকে বন্যা মোকাবিলা শিখতেও পারে।’
এদিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে আলিপুর রহমানীয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান ভবন নির্মাণকাজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাশ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষ থেকে তথ্যমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে এবং ভারতের হাইকমিশনার তার কার্যালয় থেকে সভাপ্রধান হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সে ভারতীয় সহায়তায় এ নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের দায়িত্বে থাকা অনিন্দ্য ব্যানার্জীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন চট্টগ্রাম-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
তথ্যমন্ত্রী এ নির্মাণ প্রকল্প এবং ইতিপূর্বেও এ ধরণের উদ্যোগ নেয়ার জন্য ভারত সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যখনই বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্কে কথা আসে, তখনই আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের ঐতিহাসিক ভূমিকা, ভারতের জনগণ ও সরকারের অকুণ্ঠ সমর্থন এবং সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে হয়।’
ড. হাছান মাহমুদ এসময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ ও ১৫ আগস্টের সকল শহীদ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণদানকারী ভারতীয় সেনাসদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, ‘ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক অকৃত্রিম এবং ঐতিহাসিক। ভারতের পার্শ্ববর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্যান্য রাজ্যসহ অনেক রাজ্যে আমরা একই ভাষায় কথা বলি, একই ভাষায় কথা বলি, একই পাখির কলতান শুনি, একই নদীর অববাহিকায় আমরা জন্মগ্রহণ করেছি, বেড়ে উঠেছি।’
ভারত সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অব্যাহতভাবে ভূমিকা রেখে চলেছে উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘ভারত- বাংলাদেশের মধ্যে বহুমাত্রিক সহযোগিতার পাশাপাশি গত ২১ জুলাই ভারতের পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার আনলোড করার পর তা বাংলাদেশের সড়কপথে পরিবহণ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পৌঁছার মধ্যদিয়ে দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। আমি মনে করি এটি যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশই উপকৃত হবে।’
সভাপ্রধান রিভা গাঙ্গুলী দাশ তার বক্তৃতায় শিক্ষা বিস্তারের কাজে যুক্ত হতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেন এবং এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান। এমপি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ তার নির্বাচনী এলাকায় এ সহযোগিতার জন্য ভারত সরকারকে ধন্যবাদ দেন।