করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে টানা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা সাধারণ ছুটি শনিবার শেষ হয়েছে।
ফলে আগামিকাল অর্থাৎ রোববার থেকে সব অফিস খুলে যাচ্ছে। যদিও দেশটিতে সংক্রমণের মাত্রা এখন বেশ উর্ধ্বমুখী।
এরই মধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বাস ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।
যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, বাসগুলো তাদের ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহন করতে পারবে।
সব অফিস খুলে দিয়ে বাসে অর্ধেক যাত্রী বহন করার এ সিদ্ধান্ত এক ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে বলে আশংকা করছেন অনেকেই।
ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন পলিয়া খানম। প্রতিদিন তেজগাঁও থেকে শ্যামলী যাতায়াত করতে হয় অফিসের জন্য।
আগে যেখানে খরচ হতো প্রতিদিন ৫০ টাকা এখন সেটি ১০০টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে তার আশংকা। আগামিকাল থেকে সব অফিস খুললেও গণপরিবহন শনিবার পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, যারা এতোদিন ঢাকার বাইরে ছিল, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তারা কিভাবে আগামিকাল অফিসে যোগ দেবে?
সব অফিস খুলে দিয়ে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহন করার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক বলে বর্ণনা করেন মিস্ খানম।
তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, গণপরিবহন খুলে দিয়ে তার দুই-তিন পরে অফিস খোলা উচিত ছিল। অফিসও অর্ধেক-অর্ধেক খোলা উচিত ছিল। প্রত্যেকবারই গভর্মেন্ট একই কাজ করেছে – গাড়ি বন্ধ রেখেছে, অফিস খুলে দিয়েছে। জনগণকে ঘোড়ার মতো টেনে নিয়ে আসছে।”
একদিকে সকালে ঠিক মতো অফিসে যাবার চিন্তা, অন্যদিকে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া। এ দুটো বিষয় মিলিয়ে অনেকের মাঝে চরম উদ্বেগ এবং ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
যাত্রী ভাড়াসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যাত্রীদের অধিকার নিয়ে কথা বলেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মোজাম্মেল হক।
তিনি মনে করেন, এখন যে ৮০% ভাড়া বৃদ্ধি করা হচ্ছে, সেটি স্বাভাবিক সময়ে কমে আসবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
“যে সঙ্কট বা অজুহাতে দেশে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়লে সেটা স্বাভাবিক সময়েও কমানোর কোন নজির নেই। এটা স্বাভাবিক সময়েও কমানোর সক্ষমতা সরকারের থাকবে বলে আমার মনে হয় না,” বলেন মি: হক।
স্বাভাবিক সময়ে গণপরিবহনে বেশ ভিড় থাকে।
সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহনের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে।
মালিক পক্ষ ভাড়া দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিলেও সেটি গ্রহণ না করে ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
অনেকেই মনে করেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হলেও সেটি নিশ্চিত করা যায়নি।
সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল হকের আশঙ্কা হচ্ছে, একদিকে যাত্রীদের প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হবে, অন্যদিকে বাসগুলোতে আগেরও মতোই গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করা হবে।
“আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে, ভাড়াটা আদায় করতে কার্পণ্য করবে না। কারণ আমাদের চালক সর্বস্ব পরিবহন ব্যবস্থা। চালকরা ভাড়াও আদায় করবে, আবার বলবে – আমি অর্ধেক যাত্রী নিতে চাচ্ছিলাম কিন্তু জোর করে যাত্রী উঠে গেছে,” বলেন মি: হক।
আকবর হোসেন
বিবিসি বাংলা