স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘করোনার এই দুঃসময়ে কাজ করতে কেবল সচিবালয়ে এসে বসে থাকাই মন্ত্রীর একমাত্র কাজ নয়। বরং দেশের কোন হাসপাতালে কী কাজ হচ্ছে, মানুষ হাসপাতাল থেকে বিনা চিকিৎসায় ফিরে যাচ্ছে কিনা, চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা, এগুলো দেখভাল ও খোঁজ নিয়ে যথার্থ উদ্যোগ নেওয়াটাই এখন আসল কাজ।’
বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দফতরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক অনির্ধারিত বৈঠকে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
প্রসঙ্গত, একটি জাতীয় দৈনিকে ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী অফিস করেন না’ শিরোনামে যে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে সেই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এক বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি ওই খবরের ‘শিরোনামেই গলদ রয়েছে’ অভিযোগ করে বলেন, ‘পরিবেশিত সংবাদটি মিথ্যা ও জনমনে উস্কানিমূলক।’
ওই খবরে বলা হয়, ‘গত ২৫ মে ছিল ঈদের ছুটি, এরপর থেকেই মন্ত্রণালয়ে অনিয়মিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী’। এই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ‘মন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা গত ২৭ মে থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। এরআগে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব করোনায় আক্রান্ত থাকায় আরেক দফা ১৪ দিনের হোম আইসোলেশনে থাকতে হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে। তারপর স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব আলী নূর ও তার পরিবার করোনায় আক্রান্ত হন এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নানের স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদও করোনায় আক্রান্ত হন। সচিবালয়ে বর্তমানে মন্ত্রীর দফতরের তিন জনসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপ সচিব, সহকারী সচিব থেকে অন্যান্য কর্মচারীসহ ৪৫ জন করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় রয়েছেন। এই অবস্থায় নিয়মিত অফিসে আসার চাইতে অনলাইনে নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাওয়াটাও কম জরুরি নয়।’
এদিকে এসব কারণে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি থাকায় কেবিনেট সেক্রেটারি দুই বার স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে কেবিনেট সভায় যোগদান না করার পরামর্শ দেন। এমনকি একবার স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এক সভা থেকে সভা না করেই চলেও আসতে হয়। সরকার ঘোষিত সরকারি ছুটিকালীন সময়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব, মহাপরিচালকসহ সকল স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, কর্মচারী কোনও ধরনের ছুটি ভোগ না করে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত আছেন। যেহেতু আক্রান্ত জনসংযোগ কর্মকর্তা, সচিব, একান্ত সচিব, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে অবস্থান করেন। তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ১ জুন থেকে বাসায় হোম আইসোলেশনে থাকতে হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যদি নিস্ক্রিয়ই থাকতাম তাহলে কিভাবে মাত্র একটি টেস্টিং ল্যাব থেকে ৬৬টি টেস্টিং ল্যাব হলো, মাত্র ১০০ করোনা পরীক্ষা থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ থেকে ১৯ হাজারে উত্তীর্ণ হলো? মাত্র ১৫ দিন সময়ে কিভাবে বসুন্ধরায় ২০০০ বেড, উত্তর সিটি করপোরেশন মার্কেট ও উত্তরার দিয়াবাড়িতে মোট প্রায় ৩০০০ বেডের কাজ শুরু হলো? কিভাবে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, শিকদার মেডিক্যালের মতো বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসা ও পরীক্ষা ব্যবস্থা শুরু হলো? সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসা দেওয়া বাধ্যতামূলক হলো। পাশাপাশি শুধু ঢাকায় থাকা কিছু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সুবিধা কিভাবে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে পৌঁছে গেলো। কিভাবে মাত্র ১০ দিনে ২০০০ নতুন চিকিৎসক ও প্রায় ৬ হাজার নতুন নার্স নিয়োগ হলো?’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এত কিছুর পরও স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যবিধি ঠিক ভাবে মেনে চলছেন। কোনও একটি সরকারি ফাইল একদিনের জন্যেও পেন্ডিং অবস্থায় রাখেননি। প্রতিদিনের সরকারি কর্মকাণ্ড প্রতিদিনই সমাপ্ত করেছেন। অথচ পত্রিকায় প্রকাশিত এই ধরনের সংবাদের মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে।’