উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনের আমেজ না কাটতেই মৌলভীবাজার জেলার সবচেয়ে বেশি চা-বাগান সমৃদ্ধ শ্রীমঙ্গল উপজেলায় এখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের হাওয়া বইছে। চা-শ্রমিকদের ভোট নিশ্চিত করতে প্রার্থীরা দিচ্ছেন দ্বিগুণ মজুরি বৃদ্ধির আশ্বাস।
আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনের জন্য ঘুম নেই প্রার্থী ও সমর্থকদের। তারা ছুটছেন ইউনিয়নের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।
তবে, নির্বাচনে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় এই মজুরি বৃদ্ধির আশ্বাস।
তবে মজুরি বৃদ্ধির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি, আলোচনা শুরু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় মোট চা-বাগানের সংখ্যা ৪২টি। উপজেলার রাজঘাট ও কালীঘাট ইউনিয়নের পুরোটিই চা-বাগান অধ্যুষিত এলাকা।
চা-শ্রমিক ময়না রায় বলেন, ‘চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বলছেন নির্বাচনে পাস করলে নাকি আমাদের মজুরি বেড়ে যাবে। এমনকি বকেয়া টাকাগুলো পৌষ সংক্রান্তির আগেই পেয়ে যাব।’
চা-শ্রমিক কলতি রবিদাশ বলেন, ‘বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা কালীঘাট ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়েছেন। তার দাবি, তিনি পাস করলেই চা-শ্রমিকদের মজুরি দ্বিগুণ অর্থাৎ ২০০ টাকা হয়ে যাবে।’
রাজন হাজরা বলেন, ‘কিছুদিন আগে শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনে চা-শ্রমিকদের প্রতিনিধি পরাজিত হন। সেই রেশ কাটেনি। চা-শ্রমিকদের নৌকায় ভোট না দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
চা-শ্রমিক সুমন পাশি বলেন, ‘আমার বাপ-দাদা নৌকায় ভোট দিয়ে আসছেন। কারণ বঙ্গবন্ধু আমাদের ভোটাধিকার দিয়েছেন। আমরাও নৌকায় ভোট দিব।’
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, ‘শুনেছি অনেক প্রার্থী প্রচারণা চালাচ্ছেন, ইউনিয়ন নির্বাচনে পাস করলেই নাকি মজুরি দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। এগুলো ভোটের মাঠে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ঠকানোর চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই না। মজুরি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে।’
অভিযোগ অস্বীকার করে কালীঘাট ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী প্রানেশ গোয়ালা বলেন, ‘চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা যে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করছেন তারাই এসব মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছেন।’
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কালীঘাট ইউনিয়নের আনারস মার্কার প্রার্থী বিজয় হাজরাও। তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে মজুরি বৃদ্ধির মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছি না।’
মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট শাখার সভাপতি জিএম শিবলী বলেন, ‘চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা অনেক দাবি একসঙ্গে দিয়ে দেন। যার কারণে আলোচনা করতে অনেক সময় লাগে। এ জন্যই মজুরির চুক্তি করতে দেরি হয়।’
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পংকজ কন্দ বলেন, ‘আমরা আলোচনায় আছি। মাত্র ৩টি বৈঠক হয়েছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদে কেউ পাস করলে মজুরি বাড়িয়ে দিবে এমন প্রচারণা পুরোটাই ভিত্তিহীন।’