মিনহাজ দিপু, খুলনা থেকে: এক সময় ভরা যৌবন জোয়ারে পরিপূর্ণ কপোতাক্ষ নদে পালতোলা বাদামের নৌকা চলতো। বণিকরা কপোতাক্ষ নদ দিয়ে কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলায় বাণিজ্য করতে আসতেন। নদকে কেন্দ্র করেই ছিল এ এলাকার মানুষের জীবন জীবিকা। খরস্রোতা সেই কপোতাক্ষ নদের কয়রার আমাদী এলাকা থেকে পাশের পাইকগাছা উপজেলার বোয়ালিয়া পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার খরস্রোতা কপোতাক্ষ নদের অংশ শুকিয়ে এখন যৌবন হারিয়েছে। কপোতাক্ষ নদের বুক চিরে চলাচল করা লঞ্চ,নৌকা আর মাছ ধরার স্মৃতি এখনো হাতড়ে বেড়ায় এ অঞ্চলের মানুষ।কয়রা উপজেলার হোগলা থেকে নাকশা গ্রাম হয়ে পাইকগাছার চাঁদখালি পর্যন্ত কপোতাক্ষ নদ ভাটার সময় একেবারেই শুকিয়ে যায়।
কপোতাক্ষ নদ চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনার কয়রা উপজেলার বুক চিরে সুন্দরবনের শিবসা নদীতে গিয়ে মিশেছে। কপোতাক্ষ নদের দৈর্ঘ্য ২৩৮ কিলোমিটার এবং ৮০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। বর্তমানে নদটি কয়রার আমাদী এলাকা থেকে পাইকগাছা উপজেলার বোয়ালিয়া পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার খালে পরিণত হয়েছে। নদে ভাঁটায় সময় নৌকা চালানো যায় না। হেঁটেই নদ পার হয় এলাকার মানুষজন।
উপজেলার আমাদী ইউনিয়নের মসজিদকুঁড় গ্রামে গিয়ে দেখা যায়,কপোতাক্ষ নদ সরু খালের পরিণত হয়েছে। নদের দুই পাশে জেগেছে বিশাল চর। চর দখল করে স্থানীয় গ্রামের মানুষ বসত ঘর , চিংড়ি ঘের,ইটের ভাটা সহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে।
কয়রা উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভাপতি মাস্টার খায়রুল আলম বলেন,জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কপোতাক্ষ নদের এই অবস্থা।দুই দশক আগেও এই নদ খরস্রোত ছিল,লঞ্চ ও অন্যান্য জলযান চলাফেরা করত।নদে ১২ থেকে ১৫ ফিট পানি থাকতে দেখেছি।কপোতাক্ষ নদ আমাদের উন্নয়নের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলার অধিকাংশ এলাকার পানি কপোতাক্ষ নদ দিয়েই নিষ্কাশিত হয়। নদ না থাকলে ভবিষ্যতে এই এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।
আমাদী ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আনিসুর রহমান বলেন,দক্ষিণ অঞ্চলের নদী গুলোতে পলি জমাতে জোয়ার ভাটার উত্থান পতন থমকে গেছে। বৃষ্টির পানি নদে পড়তে সে পানি দ্রুত নিষ্কাশনের সুযোগ হারিয়ে যাওয়ায় এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।কপোতাক্ষের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে,গ্রামের টিউওয়েলে আগের মত পানি ওঠে না।
উপজেলার আমাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জুয়েল বলেন,পাইকগাছার কপিলমুনি ও চাঁদআলী এলাকায় সেতু নির্মাণের ফলে কপোতাক্ষের পানিপ্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় নদটি এখন মৃতপ্রায়।বর্তমানে কপোতাক্ষ নদের খনন কাজ চলমান আছে। কিন্তু কাজে ধীরগতির কারণে বর্ষার আগে খনন কাজ শেষ না হলে এই এলাকার মানুষ চরম দূর্ভোগে পড়বে।
খুলনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী তাহমিদুল ইসলাম বলেন, কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২৪ সালের মধ্যে পাইকগাছা বোয়ালিয়া থেকে কয়রা উপজেলার আমাদী পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার কপোতাক্ষ নদ পুনঃখনন করা হবে। এ খননকাজ শেষ হলে কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলার জলাবদ্ধতা নিরসন হবে।