আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামে নতুন রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সাতটি দলের নেতারা ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। এ নিয়ে ভবিষ্যৎ করণীয় ঠিক করতে রোববার রাজধানীর উত্তরায় জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসায় এক বৈঠকে বসেন সাত দলের শীর্ষ নেতারা। এদিন দুপুর পৌনে ১টায় এ বৈঠক শুরু হয়। প্রায় চার ঘণ্টা চলে এ বৈঠক। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে আগামীর আন্দোলন সংগ্রামকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যৎ করণীয় ঠিক করার পাশাপাশি মাঠের ‘প্রধান বিরোধী দল’ বিএনপি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দলটির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়া নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ওইদিনের বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে এসব নতুন জোটের নেতাদের অবহিত করেন। তবে বিএনপি নিয়ে চূড়ান্ত কোনো আলোচনা না হলেও আগামীর আন্দোলন সংগ্রামে দলটির কর্মসূচির বিষয়ে পজেটিভ থাকার বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন জোটের নেতারা। তাই আপাতত বিএনপি’র সঙ্গে আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা চলমান রাখবে জোটের অন্য দলগুলো। এরমধ্যে নতুন জোটের কার্যক্রম আরও সক্রিয় করা হবে। বৈঠকে জামায়াত নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানা গেছে।
এদিকে আরও বিস্তারিত আলোচনার জন্য আগামী ১২ই মে নতুন এই জোটের আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না মানবজমিনকে বলেন, দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং কিছু সাংবিধানিক সংশোধনের প্রস্তাব রয়েছে আমাদের। যেসব বিষয়গুলো আমরা মৌলিক মনে করি সেগুলো রেডি করার পরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আমাদের মতো চেষ্টা করছি। বিএনপি যদি তাদের কোনো প্রস্তাব নিয়ে আসে তখন আমরা কথা বলবো।
বৈঠকে অংশ নেয়া গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, বৈঠকে জোটের ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা কর্মসূচির ভিত্তিতে অপরাপর শক্তির সঙ্গে কথা বলবো। কিংবা সেই আন্দোলনের ফল কি হবে সেটা নিয়ে আমাদের নিশ্চয়ই আলোচনা হবে।
বৈঠকে বিএনপি’র বিষয়ে কি আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি তো বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে দলগত ভাবে বসার জন্য। এক্ষেত্রে সবাই ইতিবাচক আছে। আর বিএনপি’র সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তো একটা বিষয় সামনে আসে যে তারা কীভাবে আন্দোলনের বিষয়টা ভাবছে। তারা কীভাবে আন্দোলন করবে, দলগতভাবে আন্দোলন করবে নাকি অন্যভাবে এসব বিষয় তো আমরা জানি না। আর আমরা তো মাঠে আছি। বিএনপি কীভাবে মাঠে নামতে চাইবে, সেটা জানার পরে আমরা বিস্তারিত বলতে পারবো।
বৈঠক শেষে জোটের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সভাপতিত্বে নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও গণসংহতি আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে ৭ দলের এই যৌথ রাজনৈতিক উদ্যোগকে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ হিসেবে আত্মপ্রকাশের লক্ষ্যে ঐকমত্য পোষণ করা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যথাসম্ভব স্বল্পতম সময়ে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির ভিত্তিতে এই মঞ্চ আত্মপ্রকাশ করবে। সভায় একইসঙ্গে বর্তমান ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন মোকাবিলায় গণতন্ত্র মঞ্চের রাজনৈতিক ভিত্তি ও কর্মসূচিসমূহ চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের সশস্ত্র সন্ত্রাসী তৎপরতায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করা হয়, এবং বলা হয় সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন জবরদস্তি করে যে ধরনের দখলদারিত্ব কায়েম করেছে তা দেশের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠের শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকে গুরুতরভাবে বিপন্ন করেছে। প্রস্তাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকারও নিন্দা জানানো হয়। প্রস্তাবে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার, কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, প্রেসিডিয়াম সদস্য বহ্নি শিখা জামালী, আকবর খান, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য নঈম জাহাঙ্গীর, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।