মো. রাসেল ইসলাম, যশোর জেলা প্রতিনিধি : মহা ষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে আজ থেকে শুরু হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজা। শার্শা উপজেলায় এ বছর ২৯টি পুজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে বেনাপোল পোর্ট থানায় ৭টি পুজা মন্ডপ রয়েছে। প্রতিটি পূজা মন্ডপ গুলোতে প্রতিমা তৈরী সহ রং, পোষাক এবং গহনা পরানোর কাজ শেষ করে শেষ মুহুর্তে প্রতিটি মন্ডপ গুলোকে সাজানো হয়েছে বাহারী ডেকোরেশন। তবে বিদ্যুৎ পরিস্তিতির বিবেচনা করে জাতীয় স্বার্থে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে আলোকসজ্জা নিরুৎসাহিত করেছে। অন্যদিকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি মন্ডপ গুলোতে বাড়তি নিরাপত্তায় সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। জানা যায়, উপজেলায় এ বছর সবচেয়ে জাকজমক পূর্ণভাবে পুজা অনুষ্ঠিত হবে বেনাপোলের পাটবাড়ী সার্বজনীন পুজা মন্ডপে। উপজেলা প্রশাসন ও পুজা উদযাপন পরিষদের তথ্য মতে, এ বছর উপজেলার ১নং ডিহি ইউনিয়ন বাদে ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ২৯টি পুজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে বেনাপোল পোর্ট থানার অধিনে বেনাপোল পৌর সভায় ৪টি,বাহাদুরপুর ২টি, পুটখালী ১টি ও শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর ২টি, গোগা ২টি, কায়বা ৩টি, বাগআঁচড়া ২টি, উলাশী ৩টি, শার্শা সদর ৭টি ও নিজামপুর ইউনিয়নে ৩টি পুজা মন্ডব রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রতিটি পুজা মন্ডপ গুলোতে সরকারী বরাদ্দের ৫০০কেজি চাউল অনুদান হিসেবে সরবরাহ করা হয়েছে। পুজা উৎসব চলাকালীন সময়ে যেন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ সময়ে মন্ডপ গুলোতে সার্বক্ষনিক পুলিশ ও পুজামন্ডব কমিটির পাশাপাশি বিজিবি নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়াও সাদা পোশাকেও পুলিশ দ্বায়িত্ব পালন করবেন । পাঁচদিন ব্যাপী পুজায় দেবী দূর্গার অধিবাস, আহবান ও বোধনের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয় পুজার মুল কাজ। চারিদিকে বাজবে ঢাকের ঢেংকুর কুর আওয়াজ। শাঁখ বাজিয়ে মেয়েরা দিবে উলুধ্বনি। পুজা মন্ডপ গুলোতে নামবে হাজারো মানুষের ঢল। মন্দিরে মন্দিরে চলবে মায়ের ভক্ত সন্তানদের প্রার্থনা। মায়ের সন্তুষ্টি বিধানে সন্ধ্যাবেলায় নৃত্যগীত সহযোগে চলবে আরতি। পূরানমতে, শান্তি, সংহতি, সম্প্রীতি প্রতিষ্টা ও দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনে বিশ্বব্যাপী মঙ্গল ধ্বনি নিয়ে হিন্দুদের মা দূর্গাদেবী এ পৃথিবীতে আসেন। আসুরিক শক্তির বিন্যাশ আর শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি লাভের জন্য হিন্দু সম্প্দায় যুগ যুগ ধরে মা দূর্গার আরাধনা করে আসছে। ভক্তরা দেবীর পদতলে ভক্তি আর পুষ্পাঞ্জলি প্রদানের অমিয় মানসে আয়োজন করেন নানা অনুষ্ঠান। শনিবার মহালায়তে পিতৃপক্ষের অবসানের মধ্যে দিয়ে দূর্গা উৎসব শুরু হবে। দেবীর ষষ্টাদী কল্পারম্ভ। সন্ধ্যায় দেবীর বোধন, আমন্ত্রন ও অধিবাস। এ সময় ঢাক ঢোল কাসার ঘন্টা আর শংখ উলু ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠবে পুজা মন্ডপগুলো। ২ অক্টোবর সপ্তমী পুজা,৩ অক্টোবর মহা অষ্টমী। অষ্টমী পুজার বিশেষ আকর্ষণ কুমারী পুজা। ৪ অক্টোবর মহা নবমী। ৫ অক্টোবর দশমী পুজা। পরিশেষে পুজা সমাপন, বিসর্জন এবং শান্তি ও জল গ্রহণের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিন ব্যাপী দূর্গোৎসব। দূর্গা উৎসবকে ঘিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ঘরে ঘরে ইতিমধ্যে বয়তে শুরু করেছে আনন্দের জোয়ার। শেষ মুহুর্তে শহর ও গ্রামাঞ্চলের শপিংমল গুলোতে বেচাকেনার ধুম লক্ষ করা যাচ্ছে। সাধ্যনুযায়ী ব্যক্তিবিশেষ বছরের বড় উৎসবে পরিবারের সবার জন্য চলছে কেনাকাটা।
পুজার সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় উপজেলা পুজা উৎযাপন পরিষদের সভাপতি শিক্ষক বৈদ্যনাথ দাস এর সাথে। তিনি বলেন, করোনার কারনে গত দু’বছর পূজা উৎসব হয়নি। এবছর শার্শা উপজেলায় ২৯টি পূজা মন্ডপের জন্য সরকারি বরাদ্ধের ৫০০ কেজি হারে সাড়ে ১৪ মে.টন চাউল মন্ডপ গুলোতে সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়াও মাননীয় এমপি মহদয়ের ব্যক্তিগত তহবিল সহ বিভিন্ন ব্যক্তি আর্থিক সহযোগিতা করছেন। পূজা চলাকালে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে সার্বিক নিরাপত্তায় প্রশাসনিক ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।এ ব্যপারে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে দফায় দফায় মিটিং হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে বেনাপোল পাটবাড়ি ৭টি সহ ২৯টি মন্ডপে মোট ৭৩টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। আশা করি এ বছর সুন্দর সুষ্ঠ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পুজা অনুষ্ঠান শেষ হবে।
নাভারণ সার্কেলের এএসপি জুয়েল ইমরান বলেন, শার্শায় ২২টি ও বেনাপোল পোর্ট থানায় ৭টি পূজা মন্ডপে নির্বিঘ্নে উৎসবমূখর পরিবেশ পূজা উৎযাপনের লক্ষ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তার দ্বায়িত্বে মন্ডব গুলোতে পূজা কমিটি, পোশাকধারি পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ দ্বায়িত্ব পালন করবেন। এদের দ্বায়িত্ব তদারকিতে বিজিবি টহল দিবে। এছাড়াও বাড়তি নিরাপত্তার জন্য এবছর অধিক গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণ ক্যাটাগরির মন্ডব গুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী সিসিটিভির আওয়ায় আনা হয়েছে।