ইতিহাসের নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটিত হয়েছিল ৭৫ এর ১৫ ই আগস্ট। এ দিন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতকেরা। হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ নিয়ে রচিত নাটক ‘জনকের অনন্তযাত্রা’ মঞ্চস্থ হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতে। নাটকটি ইতোমধ্যে সরকারিভাবে দেশের প্রতিটি জেলায় মঞ্চস্থ হয়েছে।
বাংলাদেশ কনসুলেট জেনারেল দুবাই সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ও প্রবাসীদের নাট্যদল ‘হিজল নাট্যমঞ্চ’র প্রথম প্রযোজনা ‘জনকের অনন্তযাত্রা’। মাসুম রেজার রচনা ও নির্দেশনায় নাটকটি ৯ সেপ্টেম্বর মঞ্চস্থ হয় আরব বিশ্বের সংস্কৃতির রাজধানী শারজার একটি অডিটোরিয়ামে। এতে অভিনয় করেছেন দেশের প্রথমসারির বেশ কয়েকজন অভিনেতা। তাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করে প্রবাসী অভিনেতারাও। এর মধ্যে আছেন- আজিজুল হাকিম, শামছি আরা সায়েকা, রামিজ রাজু, শিবলী আল সাদিক, এস এম শাফায়াত, উচ্ছাস, নাজমুল হক, মেহেদি হাসান, জাহুর হোসাইন শাহীন, জসিম উদ্দিন, পলাশ, নাজমা জর্জ প্রমুখ।
নাটক মঞ্চস্থ হওয়া অবস্থায় বহু দর্শককে কাঁদতে দেখা যায়৷ অভিনেতাদের অনবদ্য অভিনয় ও নাটকের বিষয়বস্তু সাড়ে তিন শতাধিক প্রবাসীদের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে।
এ নাটক প্রসঙ্গে মাসুম রেজা বলেন, ‘জনকের অনন্তযাত্রা শুধু একটি নাটক নয়;বরং বাঙ্গালি জাতির নির্মম ইতিহাস। নাটকটির প্রতিটি চরিত্রের জন্য বাক্যগুলো যখন আমি লিখি তখন নিজেই কান্না করেছি৷ যে মানুষটি দেশকে স্বাধীন করলো তাকেই হত্যা করা হয়৷ সঙ্গে পুরো পরিবারকে, যেখানে ছিল ১০ বছর বয়সী একজন শিশুও। পরদিন ভোরে পরিবারের সবাইকে সমাধিস্থ করা হয় রাজধানীর বনানী কবরস্থানে। কেবল বঙ্গবন্ধুকে কফিনে করে নিয়ে যাওয়া হয় তার চিরচেনা নিজভূমি টুঙ্গিপাড়ায়। রাষ্ট্রপতিকে তার শেষ শয্যায় শায়িত করা হবে, অথচ ছিল না রাষ্ট্রীয় আয়োজন, কাফনের কাপড়, জানাজা, কোনো কিছুর জোগাড় নেই। তবুও সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে সেদিন ছুটে এসেছিল আশপাশের সাধারণ মানুষ। একজন মুসলমানকে যেভাবে সমাধিস্থ করা হয়, সেভাবেই হয়েছিল পিতার অন্তিম শয়ান।’
তিনি বলেন, ‘তথ্য, তত্ত্ব ও গবেষণার মাধ্যমে ১৬ আগস্টের সারাদিনের খণ্ডচিত্র জোড়া দিয়ে সাজানো হয়েছে জনকের অনন্তযাত্রা নাটকের গল্প। এ নাট্যে সেদিনের ইতিহাস হয়ে উঠেছে গল্পনির্ভর, আর গল্পটা হয়েছে ইতিহাসনির্ভর।’
কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন বলেন, ‘৭৫ এর ঘাতকেরা জাতির পিতার দাফন নিয়ে যে নির্মমতা দেখিয়েছিল নাটকটিতে আমরা তা দেখতে পেলাম। হত্যাকাণ্ড ও দাফন নিয়ে ইতিহাস বিকৃতকারীদের জন্য নাটকটি সঠিক জবাব দিচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীরা মুগ্ধ হয়ে ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার হৃদয় নিয়ে নাটকটি দেখেছে।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন, কনস্যুলেটের শ্রম সচিব মুহাম্মদ আব্দুস সালাম, পাসপোর্ট সচিব কাজী ফয়সাল, প্রথম সচিব শাহনাজ পারভীনসহ কনস্যুলেটের কর্মকর্তা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।