শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। একই সঙ্গে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শাবিপ্রবি দিবস যেন যথাযথভাবে পালন করা হয়, সে বিষয়েও ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি।
যদিও উপাচার্যের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যেসব অভিযোগ তুলেছে, তার তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে রাষ্ট্রপতিই সব সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানানো হয়েছে।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপাচার্যের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী এ পরামর্শ দেন। বৈঠক শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন ও কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
ইশফাকুল হোসেন বলেন, ‘মন্ত্রী আলোচনায় শিক্ষকদের প্রতি ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি উপাচার্যকে তার দায়িত্ব পালন করে যেতে বলেছেন।’
শিক্ষামন্ত্রীর পরামর্শের বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘মন্ত্রী বলেছেন- উপাচার্যের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যেসব অভিযোগ তুলেছে, তার তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে রাষ্ট্রপতিই সব সিদ্ধান্ত দেবেন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। দিবসটি যেন যথাযথভাবে পালন করা হয়, সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।’
এর আগে সিলেট সার্কিট হাউজে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষার্থীদের পক্ষে বৈঠকে অংশ নেন শাহরিয়ার আবেদিন, নাফিসা আনজুম, সাব্বির আহমেদ, সাবরিনা শাহরিন রশীদ, মোহাইমিনুল বাশার রাজ, আশিক হোসাইন মারুফ, ইয়াসির সরকার, সুদীপ্ত ভাস্কর অর্ঘ, আমেনা বেগম, মীর রানা ও জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব।
গত ১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ১৫ জানুয়ারি ছাত্রলীগ হামলা চালায়। পরদিন ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরে আন্দোলনটি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়।
কর্মসূচির একপর্যায়ে ১৯ জানুয়ারি থেকে এক দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। অনশনের আট দিন পর ২৬ জানুয়ারি সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বরেণ্য কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনুরোধে অনশন ভাঙেন শিক্ষার্থীরা।
এর ১৪ দিন পর গত বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকে পরপর দুদিন উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনের ছবি, ব্যঙ্গচিত্র সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলছে ও চলবে।’ এদিন তাঁরা অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে উপাচার্যের পক্ষ নেওয়াদের হুঁশিয়ারি দেন।
এরপর আজ শুক্রবার সকালে শাবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে ও চলমান সংকট নিরসনে সিলেট পৌঁছান।