বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ দখলদারদের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ রায়েন্দা খালের সেতু নির্মাণ। খালের দুই পারের সংযোগ সড়কের জায়গা দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন স্থানীরা। যে কারণে প্রায় ১০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে সেতুটি নির্মাণ করতে পারেনি এলজিইিডি বিভাগ।
২০২১ সালের ১৭ আগস্ট রায়েন্দা খালের লোহার পিলার ও আরসিসি ঢালাইয়ের পুরোনো সেতুটি ভেঙে পড়ে খোন্তাকাটা ও রায়েন্দা ইউনিয়নের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে ওই সেতুর পাশেই দুই পারের জনপ্রতিনিধিরা জরুরিভাবে একটি কাঠের পুল নির্মাণ করেন। সেই কাঠের পুলটি এখন নড়বড়ে। নতুন সেতুর প্রকল্পটি স্থগিত হওয়ায় নড়বড় পুল দিয়ে শিক্ষার্থীসহ প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। দখল উচ্ছেদ করে সেতুটি দ্রুত নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেতুটি ভেঙে পড়ার পর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) গ্রামীণ সহায়তা সেতু প্রকল্পের মাধ্যমে রায়েন্দা খালে ৭৪ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি সেতু নির্মাণের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রায় ১০ কোটি টাকা নির্মাণব্যয় নির্ধারণ করে মাটি পরীক্ষা এবং নকশা তৈরির কাজও সম্পন্ন হয়। কিন্তু প্রকল্পের ধীর গতির কারণে আস্তে আস্তে দুই পারের সংযোগ সড়কের জায়গা দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন স্থানীয়রা। ফলে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় সেতুটি নির্মাণে।
রায়েন্দা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান বাবুল তালুকদার বলেন, পুরোনো সেতুটি ভাঙার দুই বছরেও নতুন সেতু নির্মাণ না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। জরুরিভাবে নির্মিত কাঠের পুল দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করছে। পুলটিও এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় সেটিও ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। দ্রুত দুই পারের দখল উচ্ছেদ করে নতুন সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই প্রশাসনের কাছে।
খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন বলেন, পুরোনো সেতুটি ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন রায়েন্দা ও খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের তহবিল থেকে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে জরুরিভাবে একটি কাঠের পুল নির্মাণ করি। ঝুঁকিপূর্ণ পুলটির দুই পাশে খুঁটি পুঁতে কোনোমতে সচল রাখা হয়েছে। অবৈধ দখলের কারণে নতুন সেতুটি নির্মাণ করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি।
জানতে চাইলে শরণখোলা উপজেলা প্রকৌশলী ফেরদৌস আলম বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের গ্রামীণ সহায়তা সেতু প্রকল্পের আওতায় আরসিসি সেতু নির্মাণের জন্য একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয় এলজিইউডি দপ্তরে। কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবনাটি গ্রহণ করে একাধিকবার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর ডিপিপি তৈরি করে। ৭৪ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণে সম্ভব্য ব্যায় ধরা হয় ১০ কোটি টাকা। এর পর সয়েল টেস্ট ও ডিজাইন তৈরি করা হয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি বিশেষজ্ঞ দল সরেজমিন পরিদর্শনে এসে অ্যাপ্রোচ রোডের জায়গা না পেয়ে সেতুর কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।
এ ব্যপারে গ্রামীণ সহায়তা সেতু প্রকল্পের নকশা প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, দুই পারের অ্যাপ্রোচ রোডের জায়গা দখল হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে অ্যাপ্রোচের জায়গা পেলে পুনরায় প্রকল্পটি গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে অবৈধ দখলের বিষয়টি সমাধান করা হবে। তাছাড়া বন্ধ হওয়া প্রকল্পটির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।