র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব নিয়মিত জঙ্গী, সন্ত্রাসী, সংঘবদ্ধ অপরাধী, খুনী, ধর্ষক, দেশাদ্রোহী, সাইবার অপরাধী, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী এবং অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। এছাড়াও র্যাব ভিওআইপি ব্যবসার মাধ্যমে সরকার তথা দেশের সাথে প্রতারণা ও জালিয়াতি দমন র্যাবের একটি গুরূত্বপূর্ণ ও চলমান অভিযান। র্যাবের এই অভিযান দেশের সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ০৩ ফেব্রæয়ারি ২০২১খ্রিঃ তারিখ আনুমনিক ১৪০০ ঘটিকা থেকে অদ্য ০৪ ফেব্রæয়ারি, ২০২১খ্রিঃ তারিখ আনুমনিক ১০:০০ ঘটিকা পর্যন্ত র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানী ঢাকার নিউ মার্কেট, তুরাগ ও শাহ আলী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভিওআইপি ব্যবসা চক্রের মুল হোতাসহ ০৩ জন ভিওআইপি ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের নাম ১। মোঃ কাজী এম এম মাহামুদ @ ছোটন (৩২), ২। রাকিব হাসান (৩০) ও ৩। বাবর উদ্দিন (৩০) বলে জানা যায়। এসময় তাদের নিকট থেকে ভিওআইপি ব্যবসায় ব্যবহৃত ১৯টি সিম বক্স ডিভাইস, ৪১৬টি জিএসএম এন্টেনা, ৩৪০০পিস টেলিটক সিম, ০৭ মিনি কম্পিউটার, ০৩ টি ওয়ারলেস রাউটার, ০৫ টি বাংলা লায়ন মডেম ও রাউটার, ০৩ টি ল্যাপটপ, (০১টি উঊখখ ও ০২ টি খবহবাড়), ০১টি ল্যাপটপ কুলার, ১০ টি বিভিন্ন চার্জার, ০৬ টি ইউ এস বি মডেম, ১২ টি পাওয়ার ক্যাবল, ২৪ টি কনসেল ক্যাবল, ০৩টি থ্রি-প্ল্যাগ, ০৪টি মাল্টিপ্ল্যাগ, ০১টি মাউস, ০৪টি মোবাইল ও নগদ ২,৩০০/- (দুই হাজার তিনশত) টাকা উদ্ধার করা হয়। বিটিআরসির দেওয়া তথ্যমতে উদ্ধারকৃত আলামতের আনুমানিক মূল্য ০৫ (পাঁচ) কোটি টাকা।
গত ০৩ ফেব্রæয়ারি ২০২১খ্রিঃ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-১০ এর আভিযানিক দলটি জানতে পারে যে, রাজধানী ঢাকার নিউ মার্কেট থানাধীন কাটাবন এলিফ্যান্ট রোড ২৭৮/৩ সরদার ভিলার ২য় তলার তালহা এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠানে অবৈধ ভিওআইপির যন্ত্রাংশ বিক্রয় করছে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে একই তারিখ আনুমানিক ১৪:০০ ঘটিকার সময় র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল এবং বিটিআরসি এর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে উক্ত স্থান হতে ০৪টি সিম বক্স ডিভাইস (যাহার গায়ে অসঢ়ষরভরবৎ উরমরঃধষ ঝড়ঁহফ ঝুংঃবস লেখা আছে) ও ০২টি মোবাইলসহ আসামী ১। রাকিব হাসান (৩০) ও ২। বাবর উদ্দিন (৩০) কে গ্রেপ্তার করে। উক্ত আসামীদ্বয়ের দেয়া তথ্যমতে একই তারিখ আনুমানিক ২৩:১৫ ঘটিকার সময় রাজধানীর তুরাগ থানাধীন রমজান মার্কেট ভাবনারটেক জনৈক শামসুল আলমের বাড়ির একটি তালা কক্ষ (যা চলমান ভিওআইপি কন্ট্রোলরুম) হতে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার চক্রের অন্যতম সদস্য মোঃ কাজী এম এম মাহামুদ ছোটন (৩২) কে গ্রেপ্তার করে। এসময় উক্ত কক্ষ হতে সংযোগ অবস্থায় ০৬টি সিম বক্স ডিভাইস, ২০০টি জিএসএম এন্টেনা, ১৪৫৭ পিস টেলিটক সিম, ০৩ মিনি কম্পিউটার, ০১টি ওয়ারলেস রাউটার, ৫টি বিভিন্ন চার্জার, ০২ টি ইউ এস বি মডেম, ৫টি পাওয়ার ক্যাবল, ১০টি কনসেল ক্যাবল, ০১টি থ্রি-প্ল্যাগ, ০২টি মাল্টিপ্ল্যাগ, ০২টি মোবাইল ও নগদ ২৩০০/- টাকা উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃত আসামী অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ী মোঃ কাজী এম এম মাহামুদ ছোটন (৩২) এর দেয়া তথ্যমতে অদ্য ০৪/০২/২০২১ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক ০৮.৩০ ঘটিকার সময় রাজধানীর শাহ আলী থানাধীন গোদারীঘাট বটতালা এলাকার ১/৩৩ নং বাসার ৫ম তলায় তাহার নিজ ফ্লাট (যা তাহার ভিওআইপি ব্যবসার প্রধান কন্ট্রোল রুম) হতে ০৯টি সিম বক্স ডিভাইস, ২১৬টি জিএসএম এন্টেনা, ১৯৪৩পিস টেলিটক সিম, ০৪ মিনি কম্পিউটার, ০২ টি ওয়ারলেস রাউটার, ০৫ টি বাংলা লায়ন মডেম ও রাউটার, ০৩ টি ল্যাপটপ, ০১টি ল্যাপটপ কুলার, ০৫ বিভিন্ন চার্জার, ০৪টি ইউ এস বি মডেম, ০৭টি পাওয়ার ক্যাবল, ১৪ টি কনসেল ক্যাবল, ০২টি থ্রি-প্ল্যাগ, ০২টি মাল্টিপ্ল্যাগ ও ০১টি মাউস উদ্ধার করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে বিটিআরসি এর কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। বিটিআরসি কর্মকার্তাদের দেয়া তথ্যমতে উক্ত অবৈধ টেলিযোগাযোগ স্থাপনার মাধ্যমে প্রতিদিন আনুমানিক প্রায় ০৬ (ছয়) লক্ষ আন্তর্জাতিক কল মিনিট অবৈধ ভাবে দেশে টার্মিনেট করা সম্ভব। এর ফলে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বর্তমান আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন রেট অনুযায়ী দৈনিক প্রায় ০৩ (তিন) লক্ষ টাকা এবং বছরে প্রায় ১০ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়া সম্ভব। এই উদ্ধার অভিযানকে বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ সাম্প্রতিক কালের সব থেকে বড় অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ী চক্র ও সরঞ্জামাদি উদ্ধার অভিযান বলে মতামত প্রদান করেন। এর ফলে বাংলাদেশ কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার চক্রের মুল হোতা ও ভিওআইপির যন্ত্রাংশ ক্রয়-বিক্রয়কারী। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ সরকারকে কর ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ভিওআইপি এর ব্যবসায়ী চালিয়ে আসছিল বলে জানা যায়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।