বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট স্টিফেন ই. বিগান বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু বাংলাদেশের একার সমস্যা নয়; বরং বৈশ্বিক অগ্রাধিকার। বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পরে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে এবং একটি স্থায়ী সমাধানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যতদূর সম্ভব রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর বিষয়ে কাজ করবে, যাতে করে রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়। একইসঙ্গে আমি জোর দিতে চাই এ সমস্যা সমাধানের জন্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উদ্যোগের ওপর।’
এই অঞ্চলের অন্যদেশগুলোরও মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলা দরকার, যাতে করে এই সমস্যার সমাধান হয় জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্যোগের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একমত এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আরও বেশি করে এ বিষয়ে আলোচনা করবে যুক্তরাষ্ট্র। রোহিঙ্গা সমস্যা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র ওয়াকিবহাল এবং রোহিঙ্গাদের অধিকারের বিষয়ে বলে আমরা মিয়ানমারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবো।’
বাংলাদেশে প্রথম সফরে এসেছেন উল্লেখ করে বিগান বলেন, ‘বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সহযোগিতার জন্য অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আমরা এই অংশীদারিত্ব এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক বিজনেস ফোরামে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে। আমরা দ্বিপক্ষীয় ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করবো।’
মিয়ামিতে বাংলাদেশ কনসুলেট খোলার বিষয়ে অনাপত্তি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর ফলে সেখানে অবস্থিত বাংলাদেশিরা উপকৃত হবে।’
কোভিডের কারণে মিশনের কার্যক্রমে সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট বলেন, ‘মিশনের কাজ পুরোদমে শুরু করার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, যাতে ছাত্ররা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে।’
এ সময় পররাষ্টমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ অনেক বেড়েছে। এর অনেক কারণ আছে এবং এর মধ্যে আছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র এবং এর ফলে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত দৃঢ়।’
তাদের দেশে একজন খুনি আছে এবং কোনও খুনিকে যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয় দেওয়া উচিত হবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘রাশেদ চৌধুরীর বিষয়ে আলোচনা করেছি এবং তিনি জানিয়েছেন তাদের অ্যাটর্নি জেনারেল বিষয়টি দেখছেন।’
ভিসা ইস্যুটি যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি সেক্রেটারি নিজে তুলেছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের ছাত্র নিতে তাদের নীতিগত কোনও সমস্যা নেই, কিন্তু কোভিডের কারণে মিশনের কার্যক্রম সীমিত হয়ে যাওয়ায় তারা ভিসা দিতে পারেনি। তারা পূর্ণ কার্যক্রম শুরু করলে ভিসা দেওয়া শুরু হবে। সম্ভবত তারা স্প্রিং সিমেস্টারে যেতে পারবে।’
ভারত বা পাকিস্থানে ভিসা দেওয়া হচ্ছে কারণ সেখানকার মিশনের কার্যক্রম ভালোভাবে চলছে, কিন্তু এখানে ৬০ শতাংশ কম কার্যক্রম হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। আইপিএস নিয়ে আলোচনা হয়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে, আইনের শাসন ও সুশাসন নিয়ে।’