উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে স্বেচ্ছায় যেতে রাজি এমন পরিবারদের নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। করেছে। এর ধারাবাহিকতায় উখিয়া টেকনাফ থেকে ৪০ জন রোহিঙ্গার একটি প্রতিনিধি দল শনিবার সকালে কুতুপালং ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। প্রতিনিধি দলটির মঙ্গলবারে ক্যাম্পে ফিরে আসার কথা রয়েছে।
রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে সম্মত কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে কুতুপালং ২-ই ব্লকের মাঝি মোহাম্মদ আমিন বলেন, ক্যাম্পের গিজগিজে বিপন্ন জীবন যাপনের চাইতে খোলামেলা বসবাসের জন্য ভাসানচরে যাওয়াটাই অনেক ভাল হবে। এক জায়গায় বেশি দিন থাকার কারণে স্থানীয়দের সঙ্গে তাদের বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে। যেসব রোহিঙ্গারা ভাসানচর দেখতে গেছেন তাদের পরামর্শের ওপর নির্ভর করছে রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যাবে কি না।
এ প্রসঙ্গে কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের চেয়ারম্যান হাফেজ জালাল আহমদ বলেন, উখিয়ার কুতুপালংয়ে বসবাস করছে প্রায় তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা। ঠাসাঠাসি করে বসবাস করার কারণে রোহিঙ্গাদের রোগব্যাধী বাড়ছে বৈ কমছে না। শীতকাল যেমন তেমন, গরমকাল আসলে রোহিঙ্গাদের ত্রাহি অবস্থার সৃষ্টি হবে। এমন পরিবেশে থাকার চাইতে ভাসানচরই নিরাপদ আবাসন বলে তিনি দাবি করেন।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার সাংবাদিকদের জানান, ভাসানচরে যাওয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে প্রতিনিধি দলের যাত্রা শুরু হয়েছে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সরেজমিন ভাসানচর আবাসন প্রকল্প পরিদর্শন করবেন। সেখানকার বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে জানবেন। প্রতিনিধি দলের কাছে ভাসানচরের পরিস্থিতি জেনে রোহিঙ্গারা যেতে আগ্রহী হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ভাসানচরে কি ধরনের সুযোগ সুবিধা গড়ে তোলা হয়েছে তা নিজেদের চোখে দেখবেন রোহিঙ্গা নেতারা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, ভাসানচর সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ধারণা দিতে এ ‘গো এন্ড সি’ ভিজিট। কক্সবাজারের ৩৪টি ক্যাম্পে থাকা ১১ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে উঠা ভাসানচর দ্বীপে অস্থায়ীভাবে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়ে সরকার প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করেছে। জোয়ার ও জ¦লোচ্ছাস থেকে ৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে সাইক্লোন সেল্টার, শিক্ষা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা অবকাঠামো। এর আগে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা তিন শতাধিক রোহিঙ্গাদের বঙ্গোপসাগর থেকে উদ্ধার করে ভাসানচরে আশ্রয় দিয়েছে সরকার।