করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে বিশ্বজুড়ে মন্দা অর্থনীতির প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই নিম্নগামী। তবে এর মধ্যেব বিপরীত ধারা দেখিয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রীতিমতো রেকর্ডের পর রেকর্ড ছাড়িয়ে রেমিট্যান্স। গত তিন মাসের প্রতি মাসেই আগের যেকোনো সময়ের রেমিট্যান্সের রেকর্ড ভেঙেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, রেমিট্যান্স পাঠানোয় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন সৌদি আরব প্রবাসীরা। বাকি দেশগুলোর মধ্যেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর আধিপত্য রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রেমিট্যান্স পাঠানোয় শীর্ষ ১০ দেশ হলো— সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমান, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, সিঙ্গাপুর ও ইতালি। অর্থাৎ শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে পাঁচটিই মধ্যপ্রাচ্যের।
এদিকে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রায় ২৬০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের সাতটি দেশ থেকে এসেছে ১৪৮ কোটি ডলার। আর কেবল সৌদি আরব প্রবাসীরাই পাঠিয়েছেন এ মাসের মোট রেমিট্যান্সের প্রায় এক-চতুর্থাংশ— ২৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৬৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে এ বছর জুলাইয়ে পাঠানো রেমিট্যান্স ৯১ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম মাসে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৩৩ কোটি ১২ লাখ ডলার।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব। প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার শ্রমিক বিদেশে যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশের গন্তব্য সৌদি আরব। গত জানুয়ারি মাসে ৫২ হাজার, ফেব্রুয়ারিতে ৪৪ হাজার ও মার্চে ফ্লাইট বন্ধের আগ পর্যন্ত ৩৮ হাজার বাংলাদেশি গেছেন দেশটিতে। সবমিলিয়ে দেশটিতে অভিবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, গত জুলাই মাসে রেমিট্যান্স আহরণে দ্বিতীয় স্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৪ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। গত বছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। তৃতীয় অবস্থানে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ২৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার, যা গত বছরের জুলাইয়ে ছিল ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ডলার।
অন্যদিকে চতুর্থ অবস্থানে থাকা মালয়েশিয়া থেকে গত জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ২৩ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, আগের বছর ছিল ১১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। পঞ্চম অবস্থানে থাকা ওমান থেকে এসেছে ১৯ কোটি ৮৩ লাখ ডলার, গত বছরে এসেছিল ১০ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। এছাড়াও জুলাই মাসে যুক্তরাজ্য থেকে ১৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার, কুয়েত থেকে ১৭ কোটি ডলার, কাতার থেকে ১২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার, সিঙ্গাপুর থেকে ৮ কোটি ২৮ লাখ ডলার ও ইতালি থেকে ৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে।
অর্থবছর হিসাবে রেমিট্যান্স
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৩১ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এছাড়াও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।
পঞ্জিকা বছরে রেমিট্যান্স
পঞ্জিকা বছরের হিসাবেও ২০১৯ সালে রেকর্ড ১ হাজার ৮৩৩ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে। এছাড়াও ২০১৮ সালে ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি মার্কিন ডলার ও ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটির বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপিতে অবদান রাখছে ১২ শতাংশের বেশি।