বহুল আলোচিত বরগুনার শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে তিনজনকে বরগুনা জেলা কারাগার থেকে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন, মো. রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় ও মো. হাসানকে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয় এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একমাত্র নারী আসামি ও নিহত শাহনেয়াজ রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে।
বরগুনা জেলা কারাগারের জেলার আবু ইউসুফ বলেন, ‘বরগুনা জেলা কারাগারে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের রাখার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। এ কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বরগুনা জেলা কারাগার থেকে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনের সড়কে সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে প্রকাশ্যে নয়নবন্ড ও তাঁর সহযোগীরা রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডের সময় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। পরের দিন ২৭ জুন মো. আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা (নম্বর ৩১, তাং-২৭/৬/১৯) করেন। এ ঘটনায় দুই ভাগে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম ভাগে সম্পন্ন হয় প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিচার। দ্বিতীয় ভাগে অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিচার হয়।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জনের রায় দেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। ওই দিন রায়ে মিন্নিসহ ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণা করা হয়। চারজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া ছয় আসামি হলেন রাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), মো. রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯) ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯)।
খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন মো. মুসা (২২), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সাইমুন (২১)।
রায়ের পর থেকেই বরগুনা জেলা কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি ছিলেন এ মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি।
গত মঙ্গলবার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ কিশোরের রায় ঘোষণা করেন আদালত। আসামিদের মধ্যে ছয়জনকে ১০ বছর, চারজনকে পাঁচ বছর ও একজনকে তিন বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। খালাস দেওয়া হয়েছে তিনজনকে।
আসামিদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন। তার মধ্যে প্রধান আসামি নয়নবন্ড ২০১৯ সালের ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সত্যতা প্রাথমিকভাবে পাওয়া গেছে।