তিমির বনিক,নিজস্ব প্রতিনিধি: ঐতিহ্য রক্ষায় অবশেষে স্থগিত হলো প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো মোগল আমলের ‘দেওয়ানের পুল’ ভাঙার কাজ। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার সেতুটি বুধবার পরিদর্শন শেষে সেতু ভাঙার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের তারা ভাঙতে নিষেধ করেন। ঐতিহ্য রক্ষার স্বার্থে মোগল আমলের এ স্থাপত্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে, ভেঙে ফেলা অংশ দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তাঁরা।
বুধবার দিনে বাপার একটি প্রতিনিধিদলের সদস্যরা গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাউশা এলাকার দেওরভাগা খালের ওপর নির্মিত ‘দেওয়ানের পুল’ দেখতে যান। এ সময় সেতু ভাঙার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের তারা সেতুটি ভাঙতে নিষেধ করেন।
বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে সংগঠনটির সহ-সভাপতি মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী ও সদস্য গোলাম সোবহান গোলাপ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাঁরা সেতু এলাকায় পরিদর্শনে ছিলেন। এ সময় বাপা নেতারা স্থানীয় বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলেন।
সেতুটি পরিদর্শন শেষে আব্দুল করিম চৌধুরী বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত সেতুর ভেঙে ফেলা অংশ সংস্কার করে পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তাই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সেতুটি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়া মোগল আমলের সেতু ভাঙায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
এদিকে বাপা নেতাদের আহ্বানে ও ঐতিহ্যপ্রেমী মানুষের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে দুপুর থেকে সেতু ভাঙার কাজ আপাতত স্থগিত রেখেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সময়ে সেতুর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে জানা গেছে, প্রায় ২০০ বছর আগে সিলেটের তৎকালীন দেওয়ানের (রাজস্ব কর্মকর্তা) নির্দেশে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ এলাকার শ্রীচৈতন্যদেবের বাড়িমুখী সড়কটি নির্মাণ করা হয়। এ সময় লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের দেওরভাগা খালে একটি সেতুও নির্মাণ করা হয়। ঐ সেতুটিই ‘দেওয়ানের পুল’ নামে সুপরিচিত। সেতু পুনর্নির্মাণ ও প্রশস্তকরণ করতে গিয়ে গত ছয় দিন আগে পুরোনো সেতুটি ভাঙার কাজ শুরু হয়।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, সেতুটি ভারী যানবাহন বহনের ক্ষমতা হারানোর কারণে সেটি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। পুরোনো সেতুটির দৈর্ঘ্য ছিল ২০ফুট ও প্রস্থ ১৬ফুট। একই জায়গায় ৯৯ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩২ফুট প্রস্থের সেতু বানানো হবে। এ জন্য ৩কোটি ৮২ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে সেতুর সংযোগ সড়কটিও প্রশস্ত করা হবে।
তবে ঐতিহ্যপ্রেমী ও সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, মোগল আমলের স্থাপত্য রক্ষায় সেতুটি সংরক্ষণ করা উচিত ছিল। প্রয়োজনে পুরোনো সেতুর পাশে নতুন আরেকটি সেতু নির্মাণ করা যেত। কিন্তু তা না করে সরকারি উদ্যোগে ঐতিহ্য রক্ষা না করে ধ্বংসের এমন প্রক্রিয়া একেবারেই দুঃখজনক ও হতাশার ও বটে।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ইতিমধ্যে সেতুর বেশ খানিকটা অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। যেহেতু সবাই সেতুটি রক্ষার আহ্বান জানাচ্ছেন, তাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আপাতত ভাঙার কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।