আব্দুল্লাহ আল শাহীনঃ বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে সারা বিশ্বের দৃশ্যপটে পরিবর্তন দেখা দেয়। অদৃশ্য জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে সবাই, নিয়ন্ত্রণে সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়। এই যুদ্ধে আমিরাতের সাহসী পদক্ষেপ খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সংযুক্ত আমিরাত সফলতার দারপ্রান্তে। দেশটিতে গত দুই সপ্তাহ থেকে আক্রান্তের সংখ্যার চেয়ে দ্বিগুণ সুস্থতার সংখ্যা। বলা যায় উচ্চহারে বাড়ছে সুস্থতার সংখ্যা। মৃতের সংখ্যাও কমে এসেছে। বন্ধ থাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সরকারি সকল অফিস আদালতে শতভাগ জনবল নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। বাণিজ্য নগরী দুবাইয়ে সরকারি-বেসরকারি সকল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে শতভাগ ও অন্যান্য স্টেটে ৫০ ভাগ জনবল নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। যদিও মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো চালু হয়নি। মসজিদ শীঘ্রই চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে মসজিদে নামাজ আদায়ের বেলায় আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বেশ কিছু দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের করোনা টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে, মসজিদে জীবাণুনাশক স্প্রে কর্মসূচি শীঘ্রই চালু হওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্বের শতাধিক শহরের সাথে ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। আরো যেসকল দেশ বাকি রয়েছে বাংলাদেশসহ বেধ কিছু দেশের সাথে ফ্লাইট চালুর জন্য এমিরেটস এয়ারলাইন্স থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় ইংরেজি গণমাধ্যমে গতকাল করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ টিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা বলেছেন “আমিরাতের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে এখন আর কোভিড -১৯ এর কোনও রোগী নেই। অধিকাংশ হাসপাতাল স্বাভাবিক রোগীদের চিকিৎসা সেবা আবারও চালু করেছে। হাসপাতালগুলোতে যে অস্বাভাবিক চাপ ছিল তা এখন আর নেই।”
সংযুক্ত আরব আমিরাতে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনটি কারণ রয়েছে বলে আমি মনে করি।
এক, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী কর্মসূচি এবং বাস্তবায়ন।
দুই, বিশেষ টিম।
তিন, সাধারণ নাগরিকদের সহযোগিতা।
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী কর্মসূচি এবং বাস্তবায়ন
আমিরাত সরকার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহসী সব পদক্ষেপ নিয়েছে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার মতো সাহসী পদক্ষেপ নিতে পেরেছে। মসজিদসহ সকল ধর্ম উপাসনালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিলিয়ন দিরহাম খরচ করে বিগত তিন মাস থেকে সারাদেশে জীবাণুনাশক স্প্রে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। যখন যে এলাকায় পূর্ণাঙ্গ ও আংশিক লকডাউনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল লকডাউন ঘোষণা করা হয়। করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বের অনেক দেশ থেকে এগিয়ে আমিরাত। শতভাগ মানুষের শরীরে এই পরীক্ষা চালানোর উদ্যোগের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ১.৭ মিলিয়ন করোনা টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। করোনাভাইরাসের আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে দেশটির জনসাধারণকে কঠোর নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি আইন অমান্য করলে জরিমানা করা হচ্ছে।
বিশেষ টিম
দেশটিতে করোনা নিয়ন্ত্রণের অন্যতম কারণ হচ্ছে বিশেষ টিমের ভূমিকা। দেশটির প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পৌরসভার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে বিশেষ টিম। এই টিমকে সহায়তা করেছে হাজারো চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও ভলেন্টিয়ার। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সঠিক কর্মপদ্ধতির কারণে আমিরাত আজ করোনা মুক্তির পথে এগুচ্ছে।
সাধারণ নাগরিকদের সহযোগিতা
রাষ্ট্রের সকল সিদ্ধান্তকে জনগণ সঠিকভাবে মেনে চলছে। বিশেষকরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল, মাস্ক ব্যবহার ও সরকারের নির্ধারিত সময়ে ঘরের বাহিরে না যাওয়ার আইনকে মেনে ঘরে অবস্থান করা।
মূলত সরকারের যুগোপযোগী কর্মসূচি ও জনগণের সচেতনতা করোনা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ এই দেশ। এখানকার আইন যেমনটা জনবান্ধন তেমনি জনগণের সচেতনতা প্রশংসনীয়। যে দেশে আইন শ্রদ্ধা কুড়াতে পারে সে দেশের আইন রাষ্ট্রের দুর্যোগকালীন সময়ে সফলতাও এনে দিতে পারে।
আব্দুল্লাহ আল শাহীন
সাংগঠনিক সম্পাদক
বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউএই
Drop your comments: