যুক্তরাষ্ট্রের ক্যামব্রিজে-বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত সাঈদ ফয়সাল প্রিন্সের মৃত্যুর পর দেশটির পুলিশ বিভাগের বিরুদ্ধে অশ্বেতাঙ্গ নির্যাতনের অভিযোগ আবারও জোরালো হয়েছে। বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের অধিবাসীরা বিক্ষোভ করেছেন শহরের সিটি হলে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের শাস্তির পাশাপাশি অশ্বেতাঙ্গদের নিরাপত্তা জোরদারের দাবি তাদের। নগর কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের পক্ষ থেকেও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সুষ্ঠু তদন্তের। খবর সিএনবিসির।
ক্যামব্রিজ সিটি হলের সামনে শুধু বাঙালি নন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অনেক মার্কিনী নেমেছেন আন্দোলনে। সবার হাতেই ‘জাস্টিস ফর ফয়সাল’ প্ল্যাকার্ড। অভিযোগ- শ্বেতাঙ্গ না হওয়ার কারণেই, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত সাঈদ ফয়সাল বা প্রিন্সরা রোষানলে পরেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর।
জানা গেছে, সিডনি স্ট্রিটের এক বাসিন্দা গত ৪ জানুয়ারি জরুরি নম্বরে কল দিলে তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেখানে পৌঁছায় পুলিশ। তাদের দাবি, ধারালো অস্ত্র হাতে সেখানে ঘুরছিলেন ফয়সাল। যদিও কাউকে হামলা বা হুমকির বিষয়টি স্পষ্ট নয়। আন্দোলনকারীরা বলছেন- গুলি না ছুঁড়ে ফয়সালকে বুঝিয়ে নিরস্ত্র করতে পারতো পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে সিএআইআর (কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন) এর মুখপাত্র ফাতুমা মোহামেদ বলেন, ফয়সাল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সাথে কোনো ধরণের সংঘাতে জড়ায়নি। এমনকি, সে কমিউনিটির কারো জন্যেও হুমকি ছিলো না। তাকে বুঝিয়ে নিরস্ত্র করার মাধ্যমে, আটক করা যেতো। আমাদের প্রশ্ন- কেনো গুলি করা হলো ফয়সালকে?
যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ বিভাগের বিরুদ্ধে আগেও কৃষ্ণাঙ্গদের অপরাধী চিহ্নিত করে হামলা চালানোর অভিযোগ আছে। যার জেরে ছড়ায় ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ এর মতো গণআন্দোলন। ফয়সালের বিষয়টি নিয়ে তাই- তড়িঘড়ি জরুরি বৈঠক ডাকা হয় ক্যামব্রিজ সিটি হলে।
এ ইস্যুতে ক্যামব্রিজের মেয়র সুম্বুল সিদ্দিকী বলেন, প্রশাসন বিক্ষোভকারীদের কষ্ট-বিভ্রান্তি-স্বজন হারানোর বেদনা অনুভব করতে পারছি। পুলিশ বিভাগ খুবই আস্থাহীনতার পরিচয় দিয়েছে। জন্ম দিয়েছে নানা বিতর্ক ও প্রশ্নের। কিন্তু, ফয়সালের মৃত্যু ইস্যুতে কোনো শক্ত বুনিয়াদ নেই। তাই, মেয়র হিসেবে আমারও দায়িত্ব রয়েছে। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না।
এদিকে, কেমব্রিজের পুলিশ বিভাগও অঙ্গীকার করেছে সুষ্ঠু তদন্তের। যদিও তারা বলছে, ধারালো অস্ত্র কেড়ে নেয়া যায়নি।
ক্যামব্রিজের পুলিশ কমিশনার ক্রিস্টিন এলো এ প্রসঙ্গে বলেন, জনমনে আস্থা ফেরানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে ক্যামব্রিজ পুলিশ বিভাগ।ভালোভাবেই বুঝতে পারছি, মর্মান্তিক এ ঘটনার কারণে আমাদের প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছে শহরবাসী। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৈয়দ ফয়সালকে গুলিবিদ্ধ করা এবং ক্ষুব্ধ শহরবাসীর কথা শুনতে আগামী বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) এক উন্মুক্ত কমিউনিটি মিটিং ডেকেছে কেমব্রিজের প্রশাসন ও পুলিশ বিভগ। আর, কেমব্রিজ পুলিশ বিভাগের প্রশিক্ষণ-প্রোটোকল ইস্যুতে বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৮ জানুয়ারি।