মোঃ রাসেল ইসলাম,যশোর জেলা প্রতিনিধি: বেনাপোল স্থলবন্দরে দু’টি ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য চালানসহ একটি ভারতীয় ও একটি বাংলাদেশি ট্রাক আটক করেছে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একটি চালানে ব্লিচিং পাউডার ঘোষণা দিয়ে কফিসহ বিভিন্ন প্রকার অজানা রাসায়নিক জাতীয় পণ্য এবং অন্যটিতে অ্যালোমিনিয়ামের ঘোষণা দিয়ে আনা হয়েছে বিপুল পরিমান ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিস কাপড়।এই ঘটনায় দু’টি সিএন্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল এবং জব্দকৃত পণ্যগুলো বাজেয়াপ্ত করে নিলাম করা হবে। এ দুটি পণ্য চালানে কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হচ্ছিল বলে বলে সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে।
কাস্টম সূত্রে জানা গেছে, যশোরের বেনাপোলের আমদানিকারক মের্সাস রিড এন্টারপ্রাইজ গত ১১ নভেম্বর ৪ হাজার ৬৭৫ কেজি ব্লিচিং পাউডার ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি করে। যার মেনিফেস্ট নম্বর হলো ২৭৫৭৮/১। বিল অব এন্টি নং- সি-৫৪৫২৫। ১৪ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটির সিএন্ডএফ এজেন্ট বেনাপোলের রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল পণ্যটি ছাড় করানোর জন্য কাস্টমে কাগজপত্র দাখিল করে। ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় বেনাপোল স্থল বন্দরের ৩২ নং শেডের সামনে থেকে ভারতীয় একটি ট্রাক (ডব্লিউবি-২৫ বি-৭১৩৩) থেকে পণ্যগুলো
বাংলািেশি ট্রাকে উঠানোর সময় কাস্টম পণ্য চালানটি যাচাই বাছাই করে তাতে ঘোষণা অতিরিক্ত ৩৬০ কেজি কফি ও এক হাজার ৯২৭ কেজি রাসায়নিক পণ্য পাওয়া যায়। এই ঘটনায় সিএন্ডএফ এজেন্ট রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনালের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। আমদানিকারক এমএস রিড এন্টারপ্রাইজের মালিক পারভেজ পোলক লাল্টু ওই সিএন্ডএফ এজেন্টেরও পার্টনার।
অন্যদিকে এলটেক অ্যালুমিনিয়াম ইন্ডাস্ট্রি গত ৯ নভেম্বর ভারত থেকে ১২ হাজার ৯০৮ কেজি অ্যালুমিনিয়াম ইনগট আমদানির ঘোষণা দেয়। যার বিল অব এন্ট্রি নং-সি-৫৩০৭৮। সিএন্ডএফ এজেন্ট মের্সাস ট্রিম ট্রেড। পরে পণ্য চালানটি বেনাপোল শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেলের কর্মকর্তারা পরীক্ষণ
করে ভারতীয় ১৮৬ পিস থ্রিপিস, শাড়ি ২৫৪ পিস, লেহেঙ্গা ৩৭ পিস, পাঞ্জাবি ৩৭ পিস, থানকাপড় ২৩ দশমিক ৬ মিটার, ফলস কাপড় ৪ পিস, খালি ব্লাড ব্যাগ ৬০ পিসসহ অন্যান্য পণ্য দেখতে পান। এ সময় বাংলাদেশি একটি ট্রাক
(ঢাকা মেট্রো-ট-১৬-৮১৬৩) জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স সাময়কি বাতিল করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বেনাপোল কাস্টমের সহকারী কমিশনার কল্যাণ মিত্র চাকমা জানান, মালামাল পরীক্ষণ শেষে এ্যাসেসমেন্টের পর বলা যাবে কত টাকার শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হচ্ছিল। এই আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট এর আগে
কতটি পণ্য চালান আমদানি করেছেন তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মের্সাস ট্রিম ট্রেডের স্বত্ত্বাধিকারী জিয়াউর রহমান জানান, এই ঘটনার সাথে আমার প্রতিষ্ঠান জড়িত নয়, গাড়ি চালক অন্যদের পণ্য আমাদের চালানের সাথে এনেছে। আমরা চালককে পুলিশে সোপর্দ করব। মের্সাস রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনালের পার্টনার পলক পারভেজ লাল্টুর সাথে সেলফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বন্দরে মিথ্যা ঘোষণার পণ্য চালান আমদানি বেড়েই চলেছে। কখনও কাস্টমস-বন্দরকে ম্যানেজ করে আবার কখনও বিভিন্ন পরিচয়ে হুমকি-ধামকি দিয়ে চলছে সরকারের রাজস্ব ফাঁকির উৎসব। তবে মাঝেমধ্যে দুই একটা চালান আটক হলেও অধিকাংশই থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আইনের ফাঁক-ফোকর
দিয়ে দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরাও থেকে যায় আড়ালে। ফলে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি বন্ধ হচ্ছে না।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বাংলা এক্সপ্রেসকে জানান, শুল্কফাঁকির ঘটনা দু;খজনক। এসব ঘটনায় প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। সাধারন ব্যবসায়ীদের হয়রানি বেড়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টমের কমিশনার মো: আজিজুর রহমান জানান, আমরা শুল্কফাঁকি প্রতিরোধে অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে শুল্কফাঁকির অভিযোগে আমরা অনেক প্রতিষ্ঠানের সিএন্ডএফ লাইসেন্স বাতিল করেছি।
ব্লিচিং পাউডারের সাথে কফি ও অ্যালোমিনিয়ামের সাথে কাপড় আনার ঘটনায় আমরা সিএন্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল ও পণ্যগুলো বাজেয়াপ্ত করেছি। এগুলো নিলাম করা হবে। সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্ট যদি সঠিক ব্যাখা দিতে না পারে তাহলে তাদের লাইসেন্স স্থায়ীভাবে বাতিল হয়ে যাবে।