তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারে মনু নদীর পানি দ্রুত বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আতঙ্কে আছেন শহরবাসী।
মৌলভীবাজারের নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে বন্যা। বিশেষ করে জেলার বড়লেখা, কুলাউড়া, জুড়ি, রাজনগর ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলে অবস্থিত ৪২টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামে পানিবন্দি হয়ে আছেন ৪০ হাজার মানুষ। যে কোনও মুহুর্তে মনু নদীর ৬৭টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ভেঙে লোকালয় তলিয়ে যেতে পারে।
তবে মেয়র বলছেন শহরবাসীকে বন্যায় ক্ষতি করবেনা। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে সবগুলো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কাজ চলমান রয়েছে। জেলা প্রশাসক বলছেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
মৌলভীবাজারের চাঁদনীঘাট সংলগ্ন মনু নদের পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটারের ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে পানি আরও বেশী বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল থেকে ব্রিজের কাছে ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জিও ব্যাগ ও বালু ভর্তি ব্যাগ ফেলে শহর রক্ষা বাঁধকে রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। তবে মনু পারের লোকজন রয়েছেন আতঙ্কে। যে কোনও মুহুর্তে নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে মারাত্মক বন্যা দেখা দিতে পারে।
দোকানপাট তলিয়ে গিয়ে কোটি টাকার ক্ষতির শঙ্কা করছেন অনেকে। মনুতে ৬৭টি ও ধলাই নদীতে ১১টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান রয়েছে যেগুলো ভেঙে বন্যার ভয়াবহ রুপ নিতে পারে।
জেলা প্রশাসকসহ সবাই দিনরাত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পানি বাড়লেও শহর যাতে রক্ষা করা সম্ভব হয়। অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড মনু নদীর বিভিন্ন বেঁড়িবাঁধসহ বিভিন্ন কাজ চলমান রয়েছে বললেও বাস্তবের সাথে এর কোনও মিল নেই। জেলায় এপর্যন্ত ৭টি উপজেলায় ৫শ বর্গ কিলোমিটারের ৪০ হাজার লোক পানি বন্দি রয়েছেন ২ লক্ষ ২০ হাজার লোক বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রহস্থ হয়েছে ১ হাজার ৩০টি বাড়িঘর। ৪ হাজার ২শ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এপর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে শিশুসহ দুজনের। পানি বাড়ার কারণে ও উজানে ঢলে বৃষ্টি হলে এ অবস্থা প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। আশ্রয়কেন্দ্রে সুপেয় পানির সমস্যাসহ রয়েছে নানাবিধ সমস্যা। যদিও প্রশাসন বলছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মেয়র দিয়েছেন আশ্বাসের বাণী।
জেলা প্রশাসন বলছে ২১০ মেট্রিকটন চাল, নগদ ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ও ১৭শ প্যাকেট শুকনোর খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে ৫০ মেট্রিকটন চাল ও ৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের কাছে মজুদ আছে ৫৪৩.৫০০ মেট্রিকটন চাল, ৩শ প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ ২ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে ১০১ টি। যারমধ্যে আশ্রিত রয়েছে ১০ হাজার পূরুষ, ৮ হাজার মহিলা, ৬ হাজার শিশু ও একজন প্রতিবন্ধী। গবাদি পশু আশ্রিত রয়েছে গরু/মহিষ ৬শ, ছাগল/ভেড়া ৭শ ও অন্যান্য ২শ। মাঠে ৬০ টি মেডিকেল টিম কাজ করছে যদিও একটিও চোঁখে পড়েনি। পানি বিশুদ্ধ করন ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে ১৫শ। জমা আছে ১ লক্ষ ৩০ হাজার। অথচ ট্যাবলেট পেয়েছেন এমন কেহ কোন কথা বলেননি।
মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান, মেয়র, যে হারে পানি বাড়ছে তাতে শহরের কোনও ক্ষতি হবেনা। এনিয়ে শহরবাসিকে ভীত না হওয়ারও অনুরোধ জানিয়েছেন।
মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি দ্রুত বেড়ে মানুষের দূর্ভোগ চরম আকার ধারন করলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে ভিন্ন কথা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান জানান, বেশ কিছু স্থান ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এক দুই দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলেও জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক বলছেন পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে, তবে এলাকার চিত্র ভিন্ন।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, আক্রান্ত এলাকায় শুকনো খাবার, চাল ও নগদ টাকা দেয়া হয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট ছাড়াও ৬০টি স্বাস্থ্য টিম কাজ করছে।
ভোক্তভোগীদের দাবী পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো মেরামত করে মানুষের জানমাল ও ফসল রক্ষায় সকলকের সার্বিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন।