বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। সাব রেজিস্টার তন্ময় কুমার মন্ডলের বিরুদ্ধে সেবা প্রাত্যাশীদের নানাভাবে হয়রানি,অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
এসব নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক ভুক্তভোগী। উপজেলার হোগলাপাশা ইউনিয়নের বাসিন্দা স্থানীয় ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান টুকু লিখিত অভিযোগে বলেন, গতকাল সোমবার (৫ ডিসেম্বর) ০.৬৩০০ একর বিলান জমি যার দলিল নম্বর ৬৫০৭, দাতা ইদ্রিস আলী রেজিস্ট্রি নিতে গেলে সাব-রেজিস্টার তন্ময় এজলাসে বসে তার কাগজ ঠিক নেই বলে দলিল ছুড়ে মারেন। পরবর্তীতে স্থানীয় একজন মহুরি তাকে সরকারি ফি ছাড়াও অতিরিক্ত ২০ হাজার টাকা সাব রেজিস্টারকে দিতে বললে ভুক্তভোগী টুকু কোন উপায় না পেয়ে ২০ হাজার টাকা মহুরি সোহাগের হাতে তুলে দেন।পরে উক্ত দলিল কোন যাচাই -বাচাই ছাড়াই রেজিস্ট্রি করে দেন। এর পরে ভুক্তভোগী তার কাগজ ঠিক ছিল বলে দাবি করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি অবহিত করেন। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে সাব- রেজিস্টার কোন উপায় না পেয়ে কামরুজ্জামানকে ২০ হাজার টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়। মোরেলগঞ্জে সপ্তাহে দুইদিন অফিস করেন এই সাব-রেজিস্টার।
স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এই দুইদিনে তিনি ৫ লক্ষাধিক টাকা বিভিন্ন মাধ্যমে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন। একশ্রেণির দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এই উপজেলার সেবা প্রত্যাশীরা। দলিল লেখক, স্ট্যাম্প ভেণ্ডার ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত এ সিন্ডিকেটের যোগসাজশে সাব-রেজিস্টার তন্ময় জড়িয়ে পড়েছেন নানা অনিয়মে।অভিযোগ রয়েছে, সাব-রেজিস্টার সিন্ডিকেটের সাথে হাত মিলিয়ে সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন দেখিয়ে, সাব-কবলা দলিলের পরিবর্তে হেবাবিল এওয়াজ, অসিয়ত নামা আমমোক্তার নামা দলিল রেজিষ্ট্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দলিলের টুকিটাকি ভুল ধরে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।তিনি এ অফিসে যোগদানের পর থেকে দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি দলিল থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করারও অভিযোগ রয়েছে। এ টাকা সিন্ডিকেটের সমন্বয়ে ভাগ ভাটোয়ারা করা হয়ে থাকে।
জানা গেছে, দলিলের ফিস ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করলেও অতিরিক্ত ফি ছাড়া সাব-রেজিস্টার কোনো দলিলরেজিস্ট্রি করেন না। সাব রেজিস্ট্রার চাহিদা মতো টাকা না পেলে বিভিন্ন কাগজ পত্রের অজুহাতে হয়রানি করেথাকেন। আবার টাকা পেলে সব বৈধ হয়ে যায়। দলিল লেখক সেরেস্তা না দিলে জমি রেজিস্ট্রি তো দূরের কথা সীমাহীন হয়রানির স্বীকার হতে হয় ভুক্তভোগীদের। তাই বাধ্য হয়েই শেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয়। তবে কাগজপত্রে ঝামেলা থাকলে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। নিয়মবহির্ভূত ভাবে প্রত্যেক দলিল থেকে সেরেস্তার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হলেও সিন্ডিকেটের ভয়ে এ নিয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হচ্ছে না। এ ব্যাপারে সাব-রেজিস্টার তন্ময় কুমার মন্ডলের সাথে মুঠোফোনে (০১৭১৭৯৬৪৯৪০) বারংবার যোগাযোগ করা হলে ও তিনি ফোন ধরেননি।