বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ মোরেলগঞ্জে শিডিউল না মেনে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং ব্যহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনমান।বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলা ১৬টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত যার আয়তন ৪৩৮ বর্গকিলোমিটার।অত্র উপজেলায় মোট ৮২ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। সরকার গত ২৪ জুন ২০২২ তারিখে জ্বালানি সাশ্রয়ে সারাদেশে লোডশেডিংয়ের ঘোষনা দিলে সরকারের পক্ষ থেকে মোরেলগঞ্জে কোন এলাকায় কখন লোডশেডিং হবে সেই সূচি ঘোষণা করে পিরোজপুর পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি।
তাদের ওয়েবসাইটে লোডশেডিংয়ের সূচি প্রকাশ করা থাকলেও নির্ধারিত সুচির সাথে লোডশেডিংয়ের কোন মিল পাওয়া যাচ্ছে না।কখনো কখনো সিডিউল মেনে লোডশেডিং হচ্ছে আবার কখনো হচ্ছে না,দেখা যায় শিডিউলে যদি সারাদিনে ২ ঘন্টা লোডশেডিং দেয়ার কথা থাকে কিন্তু সেখানে লোডশেডিং হচ্ছে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। সপ্তাহের মধ্যে যে কোন দিন সকাল থেকে সারাদিনে দেখা গেছে মোরেলগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ১ থেকে ২ ঘন্টা লোডশেডিং হলেও সন্ধ্যার পরে দফায় দফায় লোডশেডিং হচ্ছে। আবার দেখা যায় সিডিউলে যে সময়ে লোডশেডিংয়ের কথা উল্লেখ আছে সেই সময়ে লোডশেডিং হচ্ছে না। এসব নিয়ম,অনিয়ম সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তবে প্রথমদিকে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারাদেশে প্রতিদিন সূচি ধরে অন্তত এক ঘণ্টা করে বিদ্যুতের লোডশেডিং শুরু হলেও ক্রমশ এটি দিন দিন বাড়ছে। জ্বালানি সঙ্কটে বিদ্যুতের উৎপাদন কমিয়ে আনতে লোডশেডিংয়ে বাধ্য হচ্ছে সরকার। মানুষের যাতে সমস্যা কম হয়, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ যাতে পায়, সেজন্যই সূচি ঠিক করে এলাকাভিত্তিক লোড শেডিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।সরকারের নির্দেশনা মতো মোরেলগঞ্জে এলাকা ভেদে লোডশেডিংয়ের সময় নির্ধারণ করে দেয় পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। তবে পূর্বনির্ধারিত সেই সময়ের বাইরেও যে লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে এজন্য ঢাকা থেকে নিয়ন্ত্রিত সুপারভাইজার কন্ট্রোল এ্যান্ড ডাটা একুইজেসন(এসসিএডিএ) বিদ্যুৎ সিস্টেমকে দায়ী করছে মোরেলগঞ্জ বিদ্যুৎ অফিস কর্তৃপক্ষ। মোরেলগঞ্জ জোনাল অফিস সুত্রে জানা যায় নির্ধারিত সূচীর বাইরে যে লোডশেডিং হচ্ছে সেটা সরাসরি ঢাকা থেকে দেয়া হচ্ছে।তবে মোরেলগঞ্জে
লোডশেডিংয়ের এমন ব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্হানীয় জনগন, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, অভিভাবকসহ পৌরবাসী। তারা বলছেন বিদ্যুৎ বিভাগের সমন্বয়হীনতা এজন্য দায়ী । পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিসের ওয়েবসাইটের দেয়া তথ্যে দেখা গেছে,তাদের তত্ত্বাবধানে গ্রাহকদের এলাকা ভেদে বিদ্যুতের লোডশেডিং দেয়া হয়েছে,কিন্তু বাস্তব চিত্র তার উল্টো, অনুসন্ধানে দেখা যায় গত ৩১ জুলাই (রবিবার) নির্ধারণ করে দেয়া সময়ের বাইরেও গ্রাহকদের অতিরিক্ত ৩/৪ ঘন্টা লোডশেডিং এর শিকার হতে হয়েছে গ্রাহকদের। মোরেলগঞ্জ জোনাল অফিস জানায় বৃহত্তর মোরেলগঞ্জ উপজেলায় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ২৩ থেকে ২৫ মেগাওয়াটের মধ্যে। এর মধ্যে দিনের বেলায় চাহিদার পরিমান শতকরা ৬০ শতাংশের মত,রাতের বেলায় অর্থাৎ সন্ধ্যার পর থেকে মুল চাহিদার মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ঘাটতি দেখা যায়। যার কারনে রাতের বেলায় গ্রাহকদের বেশি লোডশেডিংয়ের স্বীকার হতে হয়। মোরেলগঞ্জে দিনের বেলায় লোডশেডিং হওয়ায় সরকারি,আধাসরকারীঅফিস,ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সাধারণ মানুষের নানা সমস্যাার সম্মুখীন হতে হয়।চলমান লোডশেডিংয়ের ব্যাপারে কথা হয় এক ব্যাংক কর্মকর্তার সাথে,তিনি এ প্রতিবেদককে জানান বেধে দেয়া সিডিউলের সাথে লোডশেডিংয়ের কোন মিল নেই,আমরা গ্রাহকদের সঠিক ভাবে সেবা দিতে পারছি না,লোডশেডিংয়ে সরকার যে এলাকা ভিত্তিক সময় বেধে দিয়েছে সেটা বাস্তবায়ন দরকার। তা না হলে দুর্বিসহ হয়ে উঠবে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।এদিকে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় হিমসিম খেতে হচ্ছে জেনারেটর ব্যবসায়ীদের।মোরেলগঞ্জ এস এস জেনারেটর সার্ভিসের মালিক দুলাল ফকির জানান সরকারের বেধে দেয়া সিডিউলের বাইরে লোডশেডিং হলে আমাদের জেনারেটর ব্যবসা চালানো সম্ভব হবে না,কারন জ্বালানি তেলের সংকট,জেনারেটর সচল রাখতে পর্যাপ্ত জ্বালানি তেল পাওয়া যাচ্ছে না,দামও বেছেড়ে বহুগুন।এভাবে চললে জেনারেটর ব্যবসা বন্ধ ছাড়া উপায় থাকবে না।এদিকে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় মোরেলগঞ্জে বেড়েছে চার্জার ফ্যান ও লাইটের দাম। এরই মধ্যে মোরেলগঞ্জ বাজারে চার্জার ফ্যানের গ্রাহক বেড়েছে দ্বীগুন, আইপিএস ও পাওয়ার ব্যাংকের ক্রেতাও বেড়েছে অনেক। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দফায় দফায় দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে ক্রেতারা।মঙ্গলবার মোরেলগঞ্জ পৌর শহরের কয়েকটি দোকানে দেখা গেছে তীব্র গরমে লোডশেডিংয়ের হাত থেকে বাঁচতে মানুষ চার্জার ফ্যান, লাইট কিনতে ভিড় করেছেন দোকানে। বাজারের প্রায় প্রতিটি দোকানেই ভিড় দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদা বাড়তে থাকায় কোম্পানি দাম বাড়িয়েছে। প্রতিদিন পাইকারি বাজারে দাম বাড়ানো হচ্ছে। অর্ডার দিয়েও মালামাল পাওয়া যাচ্ছে না। পূর্বের অর্ডারও বাতিল করে দিচ্ছে। গত এক সপ্তাহে চার্জার ফ্যানের দাম ৪০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।বাজারের হাওলাদার ইলেকট্রনিকসের মালিক বলেন, চার্জার ফ্যান-লাইটের দামই বেড়েছে শুধু। অন্য ইলেকট্রনিকস পণ্যের দাম আগের মতই রয়েছে। ক্রেতারা বলছেন, প্রচন্ড গরম আর লোডশেডিংয়ের হাত থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে চার্জার ফ্যান, লাইট কিনতে এসেছেন। কিন্তু এখানেও দামে স্বস্তি নেই। বাড়তি চাহিদার অজুহাতে দাম বাড়ানো হচ্ছে।
সরকারি সিডিউল অনুযায়ী লোডশেডিং না হওয়ার কারন যানতে চাইলে মোরেলগঞ্জ জোনাল অফিসের দায়িত্বরত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জনাব এ বি এম মিজানুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন আমার জোনাল অফিসের আওতায় ৮২ হাজার গ্রাহকের বিপরীতে প্রতিদিন চাহিদা ২৩ থেকে ২৫ মেগাওয়াট, কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় সিডিউল মানা সম্ভব হচ্ছে না।ঢাকা থেকে নিয়ন্ত্রিত (এসসিএডিএ) বিদ্যুৎ সিস্টেমের কারনে সিডিউল অনুযায়ী লোডশেডিং হচ্ছে না,তবে আশা করছি খুব শীঘ্রই এ সমস্যার সমাধান হবে।