বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ দেশে গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষদের বাড়িঘর দিয়ে পুনর্বাসনের যে উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়েছেন, সেই প্রক্রিয়ায় তৃতীয় ধাপে স্থায়ী ঠিকানা পেলো ৩২ হাজার ৯০৪টি পরিবার। ঈদের ঠিক আগে জমিসহ বাড়ি পাওয়ার আনন্দে এসব মানুষের মুখে এখন রাজ্য জয়ের হাসি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভার শেষ সীমান্তে ও উপজেলার চাঁদপাই এবং বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের মাঝে আন্তর্জাতিক মোংলা-ঘষিয়াখালী বঙ্গবন্ধু চ্যানেলের পাড়ে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক এ ঘরগুলো। সেখানকার পরিবেশ দেখে যে কেউই ভাববেন এটি কোনো রিসোর্টই হবে।
সেখানে ২ শতাংশ জায়গায় প্রতিটি ঘরে দুটি কক্ষ রয়েছে, সঙ্গে রয়েছে রান্নাঘর ও শৌচাগার। প্রতিটি ঘরের চারপাশে খোলা জায়গা রয়েছে, যেখানে উপকারভোগীরা চাইলে শাকসবজি আবাদ করতে পারবেন।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) এসব পরিবারের হাতে ঘরের মালিকানাসহ দলিল তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সকালে এই কার্যক্রম এর শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুনেছেন ঘর পাওয়া উপকারভোগী নিঃস্ব এসব মানুষের অনুভূতি। এরই আলোকে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলায় ১৪০ টি পরিবারকে উপজেলা অফিসার্স ক্লাবে জমিসহ ঘরের কাগজপত্র হস্তান্তর করা হয়।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ হতে এর আগে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে এক লাখ ২৩ হাজার ২৪৪টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে বাড়ি দেওয়া হয়েছে। এবারের ঘর হস্তান্তর শেষে মোট দেড় লাখ গৃহহীন পরিবার সরকারের উপহারের ঘরের মালিক হলেন। পর্যায়ক্রমে মোট ৯ লাখ গৃহহীন পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রকল্পের ঘর উপহার দেওয়া হবে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের এসব ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে সরকারি খাস জায়গা কিংবা দখল হওয়া জায়গা দখলমুক্ত করে। যেখানে এ ধরনের জমি নেই সেখানে জমি কিনছে সরকার। ইতোমধ্যে দেশের আট বিভাগে বিপুল পরিমাণ বেদখল হওয়া সরকারি খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে।
মোংলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কমলেশ মজুমদার’র সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আবু তাহের হাওলাদার, ভাইস-চেয়ারম্যান মোঃ ইকবাল হোসেন, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান মিসেস কামরুন্নাহার হাই, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ জাফর রানা, মোংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র ও পৌর আ’লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আঃ রহমান, মোংলা থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম প্রমূখ। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারি, জনপ্রতিনিধি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রায়ণ-২ প্রকল্প এর আওতায় ভূমি মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এর সার্বিক তত্বাবধায়নে এই ঘর ও জমিসহ ঘর প্রদান করা হয়। মোংলা উপজেলা পরিষদ অফিসার্স ক্লাব কক্ষে জমিসহ ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানটি আয়াজন করে মোংলা উপজেলা প্রশাসন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক জমিসহ ঘর পেয়ে খুশিতে আত্মহারা উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ভূমিহীন ও গৃহহীন ১৪০টি পরিবার, জমিসহ নতুন ঘর পেয়ে অনেকেই আবেগ আপ্লুত হয়ে পরেন।
সরকারের নির্মাণ করে দেওয়া জমিসহ পাকা ঘরে উঠতে পেরে আনন্দে আত্মহারা ভূমিহীন পরিবারগুলো। বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধী, হতদরিদ্রসহ অসহায় ভূমিহীনদের দুই শতক জমিসহ পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। রমজানে নতুন পাকা ঘরে রোজা রেখে ঈদুল ফিতরের দিন আনন্দ করবে এমনই আশা তাদের। পাকাঘরের পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংযোগ, বিশুদ্ধ পানির জন্য গভীর নলকূপ স্থাপনসহ স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে লেখাপড়ার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নামাজের জন্য মসজিদ নির্মাণের দাবি জানান তারা।
মোংলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: জাফর রানা বলেন,যারা এখানে থাকবেন তাদের জন্য বিদ্যুত ,পানির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে । সেই সাথে পরিবেশ রক্ষায় এইসব ঘরের জমিতে বজ্রপাত প্রতিরোধ ও ভূমিক্ষয় রক্ষায় দেড় হাজার তালগাছ রোপন করা হয়েছে ।একই সাথে লাগানো হয়েছে কলা গাছসহ বিভিন্ন রকম গাছ। মোংলা নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা এই আবাসন এলাকা হবে খুবই মনোরম পরিবেশ ।
ঘরগুলোর নির্মাণ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে নিরলসভাবে কাজ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার। তিনি বলেন, অত্যন্ত সুন্দর একটি পরিবেশে এ ঘরগুলো করা হয়েছে। ঘর নির্মাণে মানসম্মত সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে এগুলো টেকসই হয়। উপকারভোগীরা নতুন এ ঘরেই ঈদ করতে পারবেন।