নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার লামাপাড়ায় যুবক মামুনকে অপহরণ করে গুম খুনের মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার ছয় আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) শুনানি শেষে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা ফেরদৌস এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে মামলার বাদী ও মিথ্যা সাক্ষীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে বিষয়ে কারণ দর্শানোর আবেদন করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী।
মামলা থেকে অব্যাহতি প্রাপ্তরা হলেন মামুনের কথিত প্রেমিকা তসলিমা, তার বাবা রহমত আলী, ভাই রফিক, খালাতো ভাই সোহেল, সাগর ও মামা সাত্তার মোল্লা।এর আগে, গত ১ নভেম্বর মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এমদাদ হোসেন সোহেল। বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) শুনানি শেষে আদালত আসামিদের অব্যাহতি দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে অ্যাডভোকেট এমদাদ হোসেন সোহেল বলেন, মামুনের জীবিত ফেরার কারণে মামলাটি মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। আমরা আদালতের কাছে রবিবার মামলা থেকে নিরাপরাধ আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করি। আজ আদালত মামলা থেকে সব আসামিকে অব্যাহতি দিয়েছেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই মামলার তিন তদন্ত কর্মকর্তাকে ৫ নভেম্বর স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে চার্জশিটের ব্যাখ্যা দেওয়ারও নির্দেশ দেন। এরপরেই এই মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতির বিষয়ে চূড়ান্ত আদেশ প্রদান করবে আদালত।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১০ মে মামুন নামে এক যুবককে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুমের অভিযোগ এনে ঘটনার দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৯ মে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন তার বাবা আবুল কালাম। ওই মামলায় ছয় জনকে বিবাদী করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামুনকে অপহরণের পর গুমের অভিযোগ করা হয়েছিল।
মামলায় আসামি করা হয়, তাসলিমা, তার বাবা রহমত উল্লাহ, ভাই রফিক, খালাতো ভাই সোহেল ও সাগর এবং মামা সাত্তার মোল্লাকে। তাদের প্রত্যেককেই গ্রেফতার করেছিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানার এসআই মিজানুর রহমান। তিনি আদালতে আসামিদের রিমান্ড চাওয়ার সময়ে আর্জিতে উল্লেখ করেন, খালাতো বোন তাসলিমা ২০১৪ সালের ১০ মে মামুনকে ডেকে নিয়ে কৌশলে অপহরণ করে বিষাক্ত শরবত পান করিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দিয়ে গুম করেছে। এরপর অল্প কিছুদিন মামলাটি তদন্ত করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। কিন্তু আসামিদের কাছ থেকে কোনও তথ্য উদঘাটনে ব্যর্থ হওয়ায় পরবর্তীতে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর আদালতে ৬ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। সাক্ষী করা হয়েছিল ২১ জনকে।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালের ১০ মে তাসলিমাকে দিয়ে কৌশলে মামুনকে বাড়ি ডেকে আনা হয়। পরবর্তীতে মামনুকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তাসলিমা। কিন্তু বিয়েতে রাজী না হওয়ায় বিবাদী ছয় জন মিলে মামুনকে কোমল পানির সঙ্গে চেতনানাশক দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে অপহরণ করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যায়। তবে কোথায়, কীভাবে ও কী অবস্থায় রাখা হয়েছে সেটা জানা যায়নি। গত ২ অক্টোবর এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠনের তারিখ নির্ধারিত থাকলেও ওই দিনই কথিত অপহরণ খুন ও গুমের শিকার মামুন আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে স্বশরীরে এসে উপস্থিত হন। ওই সময় আদালত ভিকটিম মামুনকে অ্যাডভোকেট শেখ ফরিদের জিম্মায় দেন।