তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: অপরাধ জগতে পরিচিত ‘সিলেটি সাঈদ’ নামে। আসল নাম মো. সাহেদ। চোর মহলে ‘বদ্দা’ নামেও পরিচিত। বাড়ি মৌলভীবাজার সদরে। মহাসড়কে রপ্তানি পোশাক চুরির অন্যতম হোতা বলা হয়ে থাকে তাকে। দুই দশকের বেশি সময় ধরে সে এই চুরিতে জড়িত।
সাহেদ এ পর্যন্ত ৮ বার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু কোনো না কোনোভাবে ছাড়া পেয়েছেন প্রতিবারেই। সর্বশেষ গত শুক্রবার সাহেদকে তিন সহযোগীসহ আবার গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- ইমারত হোসেন সজল, শাহজাহান ওরফে রাসেল ওরফে আরিফ ও হৃদয়।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে র্যাব।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, গত বছরের অক্টোবরে ব্রাজিলের একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি করা পোশাক চট্টগ্রাম বন্দরে নেওয়ার পথে চুরির ঘটনা ঘটে। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় গত ৬ জানুয়ারি। এদিন দেশের পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এ প্লাস সোয়েটার লিমিটেডকে একটি ভিডিও পাঠায় ব্রাজিলের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। তাতে বলা হয়, অক্টোবরে এ প্লাস সোয়েটারের পাঠানো অনেক কার্টুন একেবারে ফাঁকা ছিল। পরে চুরি হওয়া পোশাকের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা পরিশোধ করে কারাখানা কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার তদন্ত করতে গিয়েই সাহেদের অপরাধ চক্রের বিষয়ে তথ্য পায় র্যাব। পরে অভিযান চালিয়ে সাহেদসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব বলছে, সাহেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৭-১৮টি রপ্তানির পোশাক চুরির মামলা রয়েছে। অধিকাংশ মামলাতেই তিনি কারাভোগ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ৬টি মামলার বিচারকাজ চলমান রয়েছে।
মহাসড়কে রপ্তানির পোশাক চুরির বেশির ভাগ ঘটনা সাহেদের নেতৃত্বে অথবা পরিকল্পনায় সংঘটিত হয়। তার দলে ৪০ থেকে ৫০ জন সদস্য রয়েছেন। চক্রে অসাধু গাড়িচালক, চালকের সহকারী, গুদামমালিক, গুদাম এলাকার আশ্রয়দাতা, চুরির মালামাল নামাতে দক্ষ কুলি সর্দারসহ একদল শ্রমিক রয়েছেন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, সাহেদের চক্রের সদস্যরা রপ্তানির পোশাক পরিবহনে সম্পৃক্ত কাভার্ড ভ্যানের চালক ও তার সহকারীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে রপ্তানির পণ্য চুরির কাজে উৎসাহিত করা হয় চালক এবং তার সহকারীকে। চুরির আগে চালকদের মাধ্যমে রপ্তানি পণ্যের নমুনার ছবি তুলে চক্রের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হত। প্রতিটি চুরিতে তাদের লক্ষ্য থাকত ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার পোশাক। একটি চুরির পর চালককে ৩০ হাজার, তার সহকারীকে ২০ হাজার, গুদামের মালিককে ৫০ হাজার এবং গুদাম এলাকায় এই চক্রের আশ্রয়দাতাকে ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হতো বলে জানান প্রেস বিফ্রিংয়ে।