টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের প্রথম কাতারে বসবেন অফিসাররা, অন্য কেউ বসতে পারবেন না- সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি ‘জরুরি নোটিশ’ সাঁটানো হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে মসজিদে প্রবেশের দরজাসহ মসজিদের বিভিন্ন জায়গায় নোটিশটি লাগিয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ এলাকায় সমালোচনা সৃষ্টি হলে নোটিশ তুলে নেওয়া হয়। তবে কেন এই নোটিশ টানানো হয়েছিল, তা নিয়ে মসজিদ কমিটি ও ইমাম পরস্পরকে দায়ী করছেন।
মসজিদ কর্তৃপক্ষের নোটিশে বলা হয়- ‘সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বাসাইল উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক নামাজের জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত এবং জুমার নামাজ চিহ্নিত জায়গার বাহিরে পড়া যাবে না এবং জামাত দাঁড়ানোর পূর্ব পর্যন্ত অফিসারগনের সম্মানে সামনের কাতারে না দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। জামাত দাঁড়ানোর সময় সামনের চিহ্নিত খালি জায়গা পূরণ করে দাঁড়াবেন। মসজিদের বাহিরে/রাস্তায় মসজিদের কার্পেট বিছানো হবে না, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর থাকবে।’
এই মসজিদের পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামছুন নাহার স্বপ্না ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আল-আমিন।
ওই মসজিদে নিয়মিত যাতায়াতকারী মুসল্লি আকতারুজ্জামান রিপন বলেন, ‘নোটিশটি টানানোর পর থেকে আমি ওই মসজিদে যাওয়া বাদ দিয়েছি। ওটা অফিসারদের মসজিদ।’
উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ঈমাম হাফেজ রেজাউল করিম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) মসজিদ পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে এ সংক্রান্ত নোটিশ সাঁটিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও শুক্রবার (৩ জুলাই) জুমা’র নামাজের আগে নোটিশটি পড়ে মুসল্লিদের জানিয়ে দেওয়া হয়। সিদ্ধান্তটা পুরোপুরি মসজিদ কমিটির। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক আমি শুধু সেটি বাস্তবায়ন করেছি।’
উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন বলেন, ‘মসজিদের ঈমামকে যেভাবে বিষয়টি লিখতে বলা হয়েছিল। তিনি সেভাবে লেখেননি। এটা তার ভুলের কারণে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে মুসল্লিরা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে নামাজ আদায় করছিলেন। যাতে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজ আদায় করেন এ জন্য নোটিশ দিয়ে বিষয়টি জানানোর জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু মসজিদের ঈমাম আগ বাড়িয়ে অফিসারদের বিষয়টি লিখেছেন। সামনের কাতারে অফিসাররা বসবেন এটা আমি তাকে লিখতে বলিনি।’
উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহার স্বপ্না বলেন, ‘নোটিশের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। পরে জানতে পেয়ে নোটিশটি তুলে নেওয়া হয়েছে। আমার অনুমতি না নিয়ে কীভাবে নোটিশ দেওয়া হলো এব্যাপারে জানতে রবিবার (৫ জুলাই) জরুরি মিটিং আহ্বান করা হয়েছে।’
এদিকে, মসজিদে গত কয়েকদিন ধরে মুসল্লিদের সামনের কাতার বাদ রেখে বসার জন্য বলে আসছিলেন মসজিদ কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়রা জানান, এই মসজিদের সামনের কাতার থেকে মুসল্লিদের উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে এর আগে।
বাসাইল উপজেলা ঈমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা মজিবর রহমান হেলালী বলেন, ‘মসজিদে যিনি আগে ঢুকবেন তিনিই প্রথম কাতারে বসবেন। মসজিদে কোনও বৈষম্য নেই। সবাই সমান। কাউকে উঠিয়ে দেওয়া যাবে না। অফিসাররা প্রথম কাতারে বসবেন, এটা হাদিস সম্মত না। মসজিদ কর্তৃপক্ষের এধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি।’
টাঙ্গাইলের ধুলেরচর মাদ্রাসার কেন্দ্রীয় দারুল ইফতার প্রধান মুফতি ও জেলা কওমী ওলামা পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘মসজিদে যে মুসল্লি আগে যাবেন তিনিই প্রথম কাতারে বসবেন। কেবল রাষ্ট্রের এমন ব্যক্তিত্ব যাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তাদের জন্য ব্যবস্থা হতে পারে, সেটা হবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের হিসেবে। যে কোনও মসজিদে এটা করা যাবে না। অফিসারদের জন্য সামনের কাতার রাখা হলে এটা ইসলাম পরিপন্থী হবে। অফিসারদের জন্য সামনের কাতার রাখার কথা বলা ঠিক হয়নি।’
উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন