বিতর্ক আর গায়ক নোবেলের পথচলা যেন একসঙ্গে। এবার কুড়িগ্রামের একটি কলেজের অনুষ্ঠানে গাইতে গিয়ে ‘‘অসংলগ্ন” আচরণ করেছেন তিনি। ক্ষুব্ধ হয়ে তার দিকে জুতা ও পানির বোতল ছোড়েন দর্শকরা। এ ঘটনার জেরে পণ্ড হয়ে যায় ফুলবাড়ি ডিগ্রি কলেজের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নোবেলের বেসামাল আচরণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে বিডিনিউজ জানায়, অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত গায়ক নোবেলের গান শুরুর কথা ছিল রাত ৯টার দিকে। তবে তিনি মঞ্চে ওঠেন ১১টা ২০ মিনিটে।
মঞ্চে উঠেই চোখ থেকে চশমা খুলে পাঞ্জাবির কলারে রাখেন নোবেল। এরপর বলতে শুরু করেন, “দ্বিতীয়বার কুড়িগ্রাম আসলাম। এর আগে এসেছিলাম- তোমাদের সাথে দেখা হয়নি। সুদূর ইন্ডিয়ার বর্ডার লাইনে থেকে গেছিলাম। তোমাদের কারও সাথে দেখা হয়নি। এবার দেখা হলো, আলহামদুলিল্লাহ। ”
কথাবার্তার মাঝে হঠাৎই “আমার চশমাটা কই” বলে চিৎকার শুরু করেন নোবেল। কিছুক্ষণ পর চশমা খুঁজে পেয়ে চোখে পরে ‘‘আমি বাংলায় গান গাই” গানটি গাইতে শুরু করেন।
দর্শকদের অভিযোগ, নোবেল বেসুরো গলায় গাইছিলেন। গানের ফাঁকে তিনি একাধিকবার দর্শকদের উদ্দেশে বলে ওঠেন, “সবার ফ্ল্যাশ লাইট জ্বলবে।” একপর্যায়ে মঞ্চের মাইক্রোফোন স্ট্যান্ডটি আছড়াতে শুরু করেন নোবেল। এমন অসংলগ্ন আচরণ করতে করতে এক সময় মঞ্চেই বসে পড়েন তিনি।
নোবেলের আচরণ দর্শকদের মাঝে ক্ষোভের জন্ম দেয়। ক্ষিপ্ত দর্শকরা তার দিকে জুতা ও পানির বোতল ছুড়ে মারেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে আয়োজকরা নোবেলকে মঞ্চ থেকে সরিয়ে নেন।
ফুলবাড়ি ডিগ্রি কলেজের ৫০ বছর পূর্তি ও সুর্বণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ও কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম রিজু বলেন, “আমরা লজ্জিত। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এ পরিস্থিতির জন্য দায় সংশ্লিষ্ট শিল্পীকে নিতে হবে। মার্জিত সুন্দর অনুষ্ঠান নিমিষেই পণ্ড করে দিলেন নোবেল।”
উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এই কলেজের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে দু’দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. মশিউর রহমান, কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ, পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আলী, সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, পূর্তি অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ও ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম রিজু, সদস্য সচিব ও জসিমিয়া মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী সে সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের প্রথম দিন ছিল বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা, ডকুমেন্টরি প্রদর্শন, র্যাফেল ড্র এবং ঢাকার শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের পর রাতে মঞ্চে ওঠেন গায়ক নোবেল।
২০১৯ সালে ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল জি-বাংলার রিয়েলিটি শো ‘‘সা রে গা মা পা”তে অংশ নিয়ে দুই দেশে পরিচিতি পান নোবেল; প্রতিযোগিতায় তিনি তৃতীয় হয়েছিলেন। এরপর বিভিন্ন সময় নানা মন্তব্য ও নেতিবাচক কাজকর্ম করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন এই তরুণ শিল্পী।